স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকবে ব্যবসায়ীরা
১৫ জুলাই ২০২৩ ২১:৩৭
ঢাকা: সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে যেকোনো প্রতিকূলতায় পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। নেতারা বলেন, ‘আমরা আছি, আপনার সঙ্গে থাকব। কারণ আপনার ব্যতিক্রম শুধু আপনি। আজ সারা দুনিয়ার চমক শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে আকৃষ্ট করতে পারে। তাই যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে আছি।’
শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই)’র আয়োজনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলনে তারা এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
‘বিজনেস কনফারেন্স অন বিল্ডিং স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা ৪০ মিনিট অবধি ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যাসহ ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য শোনেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশের মানুষকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গেছেন। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব, আমরা ভুল করবো না। বাংলাদেশ আগামী দিনে স্মার্ট হিসাবে গড়ে উঠবে। আমরা উন্নত সমৃদ্ধ ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে পাশে ছিলাম, পাশে থাকব। আপনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশ ভবিষ্যতেও বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে।’ এসময় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীবান্ধব স্মার্ট অবকাঠামোসহ জনবল তৈরিরও আহ্বান জানান নেতারা।
নেতারা আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচন আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ হবে। সংবিধান অনুযায়ী হবে। প্রয়োজনে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ৬৪টি জেলার ব্যবসায়ী সম্মেলন করে সরকারের উন্নয়ন প্রচারণা করা হবে।’ একইসঙ্গে ব্যবসায়ীবান্ধব পরিবেশ বজায় রেখে নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যাতে সহনশীল থাকে সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সম্মেলনে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আজকে শেখ হাসিনার বিকল্প শুধু শেখ হাসিনা। ব্যবসায়ীরা সবসময় চায় শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। একসময় আমরা দেখেছি আগুনসন্ত্রাস, আবার হরতাল-অবরোধ, আবার পদযাত্রা মিছিল।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিটিং করুক, মিছিল করুক জনজীবনকে বিপদগ্রস্ত করে কোনো রাজনীতি হতে পারে না। আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য এদেশের অর্থনীতি। এই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। গণতন্ত্র মানে এই না যে আপনি যা খুশি তাই করবেন। মানুষের জানমাল রক্ষা করতে হবে। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে। আজকে বাংলাদেশ নাম এলেই বলে প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা। একসময় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বলত, এখন বঙ্গবন্ধু প্লাস শেখ হাসিনার বাংলাদেশ বলে।’
এক/এগারোর সময় ব্যবসায়ীদের উপর অত্যাচারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে আবার এক/এগারোর সরকার। এই স্বপ্ন যদি কেউ দেখে আমার মনে হয় আমাদের এই ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট, এটাকে কিভাবে প্রতিহত করতে হবে। সেই স্বপ্ন দেখে আর কারও লাভ নাই। এই ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আবার তত্ত্বাবধায়কের নামে এক/এগারোর সরকার নিয়ে আসবে এবং যত বিত্তশালী সমাজে প্রতিষ্ঠিত স্থানে গেছেন, তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার হবে। আমাদের যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান ওনি জেলে ছিলেন, আমাদের এডভাইরজার সালমান সাহেব ওনি জেলে ছিলেন। তাই এইসব ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী যে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন সে অনুযায়ী যদি আমরা এগিয়ে যাই এ দেশে গরীব বলতে কোন শব্দ থাকবে না।’
‘আমরা আছি, আজীবন আপনার সঙ্গে থাকব। আমৃত্যু আমরা আপনার সঙ্গে থাকব। কারণ আপনার ব্যতিক্রম শুধু আপনি। আজ সারা দুনিয়ার চমক শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে আকৃষ্ট করতে পারে’, বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগামীতে আমাদের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো। এরজন্য শিল্প কৃষি সেবাখাতে অব্যাহত বিদ্যুৎ সরবরাহের নিরবিচ্ছিন্ন রাখার প্রচেষ্টা নিতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ভবিষ্যতে আট লেন রাস্তা করে সমস্যার সমাধান করা যাবে না।’ একইসঙ্গে কনফারেন্স ছাড়াও সামনের দিনে অফিসিয়াল মুডে মিটিং করার উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান এই প্রবীণ ব্যবসায়ী নেতা।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার। এর কোননো বিকল্প নাই। আমরা আপনার সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকবো।’
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবির) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার,ব্যবসায়ী নেতা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, হা-মীম গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ, সেলিম ওসমান,নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমেদ, বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম, বিজিএমএই’র সভাপতি ফারুক হাসান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, এইচএসবিসি ব্যাংকের সিইও মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সহসভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়্যারম্যান আবদুল মুক্তাদির, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সামির সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ব্যবসায়ী নেত্রী সেলিনা মেরী, নিহাদ কবির, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন,বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদসহ অনেকে।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। পরে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। সম্মেলনের প্রতিপাদ্যে নিয়ে একটি থিম সং প্রদর্শিত করা হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তবে সময়ের স্বল্পতার কারণে তারা উভয়ই বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্য প্রদান পর্ব পরিচালনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও