‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
১৫ জুলাই ২০২৩ ২৩:৩৬
ঢাকা: বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই বাংলাদেশ আজ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর সেই দায়িত্ব আপনাদের উপর। কারণ, বাণিজ্য বসতের লক্ষ্মী। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য যত প্রসারিত হবে, মানুষের আর্থিক অবস্থা তত ভালো হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সবধরনের সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছি। অন্তত ওই হাওয়া ভবনের মতো খাওয়া ভবন নাই। আপনাদের কেউ ঝামেলা করবে না। আমরা চাই স্মার্ট বাংলাদেশ। এটা গঠনে ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি লাভবান হবেন।
শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই)’র আয়োজনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিজনেস কনফারেন্স অন বিল্ডিং স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন তিনি। বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যাসহ ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য শোনেন। পরে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ ব্যবসাবান্ধব সরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্প-কলকারাখানা কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আজ আমাদের সামনে আছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। যেখানে বেশিরভাগ দক্ষ জনশক্তি দরকার। শুধু স্বপ্ন দেখলেই চলবে না। স্বপ্ন বাস্তবায়নেরও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আর সেই ধরনের চিন্তাভাবনা থাকতে হবে।’
যুব সমাজকে উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা নিজেরা শুধু পাস করে চাকরির পিছনে ছুটবে না। নিজেরাই মাস্টার হবে, নিজেরাই উদ্যোক্তা হবে, আর মানুষকে চাকরি দেবে। সেই যোগ্যতা তারা অর্জন করবে।’ এ বিষয়ে তার সরকারের স্টার্ট আপ প্রোগ্রাম, কোম্পানি আইন পরিবর্তন করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু ব্যবসা করি না। অন্তত আমি তো বলতে পারি, সরকারপ্রধান হিসাবে ব্যবসার ‘ব’ও বুঝি না। কিন্তু আমরা ব্যবসাকে উৎসাহিত করা, সুযোগ সৃষ্টি করা, সুবিধা তৈরি করে দেওয়া, পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া এবং সেই সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য আপনারা করবেন। কে কোন দল আমরা কিন্তু কখনো সেটা দেখিনি। কে কোন ব্যবসাটা করেন, কার ব্যবসার ফলে আমার দেশ লাভবান হচ্ছে, দেশের মানুষ লাভবান হচ্ছে সেটাই কিন্তু আমার কাছে বিবেচ্য। যে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যার যখন যেটা সুবিধা, যে যখন আসেন আমরা কিন্তু তাদের সেই সুযোগটা দিই। আজ অন্তত এইটুকু বলতে পারি, আমরা কোনো হাওয়া ভবনও খুলিনি। আর কোনো খাওয়ার ব্যবস্থাও করিনি। স্বাধীন মতো সবাই ব্যবসা করতে পারেন- সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই দেশের মানুষ, সামাজিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি রাজনীতি নানাবিধ বিষয়ের উপর ব্যবসার প্রসার ও উন্নয়ন নির্ভর করে। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, ১৪/১৫ বছর আগে যে বাংলাদেশ ছিল এখন আর সে বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি।’
গ্রামীণ অর্থনীতির পরিবর্তন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এবার আমি আমার গ্রামে গেলাম। আমাদের গ্রামের বাড়িতে কোনো টেলিভিশন ছিল না। জয় আমার সঙ্গে ছিল। খেলা দেখবে। আমি বললাম, একটা টেলিভিশনের ব্যবস্থা করতে হয়। পাটগাঁতি বাজার থেকে দেখি ৫৫ ইঞ্চির একটি এইচডি টেলিভিশন নিয়ে হাজির। পাটগাঁতি বাজারের এই অবস্থা! শুধু তাই নয়, দুইশ’ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে কোরবানি ঈদের আগে।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আমাদের অর্থনীতির উপর যথেষ্ট চাপ। এটাও আপনাদের বিবেচনায় আনতে হবে। কাজেই যারা রেমিটেন্স পাঠায় তারা যেন সেটা কমিয়ে না দেয়। আর যারা টাকা পয়সা বাইরে রাখেন, তারা দেশে রাখলে অনেক বেশি ইন্টারেস্ট পাবেন- আমরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছি। আর ফরেন কারেন্সি যেন দেশে রেখে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নিতে পারেন- সেই সুযোগটাও সৃষ্টি করে দেব। ইতোমধ্যে সেই নির্দেশনাও দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি যে, ওই হাওয়া ভবনের মতো খাওয়া ভবন নাই। আপনাদের আর কেউ ঝামেলা করবে না। সবসময় ব্যবসা বাণিজ্যে আমরা সহায়তা করে যাব। আমরা চাই, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি লাভবান হবেন। ২০৪১ সালে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা গড়ে তুলব।’
এর আগে, জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নিয়ে একটি থিম সং প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সময় স্বল্পতার কারণে উভয়েই বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবির) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার,ব্যবসায়ী নেতা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ, সেলিম ওসমান, নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমেদ, বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম, বিজিএমএই’র সভাপতি ফারুক হাসান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল।
এ ছাড়াও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, এইচএসবিসি ব্যাংকের সিইও মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সহসভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়্যারম্যান আবদুল মুক্তাদির, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সামির সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ব্যবসায়ী নেত্রী সেলিনা মেরী, নিহাদ কবির, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম