Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘চুপ করে থেকে আবার টুপ করে ক্ষমতায় আসার ফাঁদ পেতেছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ জুলাই ২০২৩ ২০:৪৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো : আওয়ামী লীগ আবার যেনতেনভাবে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (১৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রামে ‘দেশ বাঁচাতে শ্রমজীবী মানুষের জাগরণ’ শীর্ষক সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন। নগরীর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহমদ সড়কে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেনতেনভাবে আবার ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এজন্য তারা প্রশাসনকে কাজে লাগাচ্ছে। ডিসি, এসপি, ইউএনও বানাচ্ছে তাদের পছন্দমতো লোকদের। নির্বাচন কমিশনের কথা আর কী বলব! তারা কথায় কথায় বলে-খুব সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে সেরকম নির্বাচন দেব, কোনো দলকে প্রভাব বিস্তার করতে দেব না, তারা পারবে সবকিছু। আসলে তারা কোনোকিছুই পারবে না। তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। আগে যেখানে ইচ্ছে সেখানে নির্বাচন কমিশন হস্তক্ষেপ করতে পারত, এখন সেটা তারা পারে না। নির্বাচন কমিশন এখন ঠুঁটো জগন্নাথ।’

বিদেশিরা আসায় আওয়ামী লীগ ‘ভালো সেজেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের সামনে আওয়ামী লীগ দেখাচ্ছে, আমরা ভালো হয়ে গেছি, বিরোধী দলকে মিছিল-মিটিং, আন্দোলন করতে বাধা দিই না। কোনো হয়রানি করছে না। এখনও পর্যন্ত কোথাও হামলা-মামলার খবর পাইনি। আমরা নোয়াখালী প্রোগ্রাম করেছিলাম, সেখানে একটু ঝামেলা করেছে। ঢাকায় প্রোগ্রাম করেছি, কোনো ঝামেলা করেনি। কিন্তু এই যে, মার্কিন মন্ত্রীরা চলে গেলেন, এখন আবার শুরু করবে। কয়েকদিন আগে কুমিল্লার এক বিএনপি কর্মীর দুই হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও একদলীয় শাসনের সব ব্যবস্থা সরকার করে রেখেছে বলে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে বকধার্মিক দল। বক নদী, বিলে এক পা দিয়ে চুপ করে বসে থাকে, যে-ই একটা মাছ নিচ দিয়ে যায় টুপ করে খেয়ে ফেলে। আওয়ামী লীগ চুপ করে বসে থেকে নতুন করে ফাঁদ পেতেছে, যাতে টুপ করে আবার ক্ষমতায় চলে আসতে পারে।’

‘আওয়ামী লীগ বলে তারা নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। হাসবো না কি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। ভূতের মুখে রাম নাম। মানুষ বার বার বেলগাছ তলায় যায় ? কারণ মানুষ জানে ওখানে গেলে ভূতে ধরবে। আমরা কি জেনেবুঝে তাদের ফাঁদে পা দেবো? তারা আমাদের আবার বেলতলায় নিয়ে যেতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। পরিবর্তন চাই বলেই আমরা রাস্তায় নেমেছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ১৫৪ জন এমপি সংসদে গিয়েছিলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাঁতের আঁধারে ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। ২০২৪ এর যে নির্বাচন আসছে, দয়া করে মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। মানুষকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে দেন।’

‘এই সমস্যা শুধু খালেদা জিয়ার না, বিএনপির না, তারেকা জিয়ার না। এই সমস্যা আজ পুরো জাতির। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করছিলাম একটি স্বাধীন মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য। আমরা চেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশে সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু সবকিছু থেকে বাংলাদেশের মানুষ বঞ্চিত হয়ে গেছে শুধুমাত্র একটি কারণে। একজন ব্যক্তি, একটি পরিবার ও একটি দল ক্ষমতাকে নিজেদের কাছে চিরস্থায়ী করতে চায়।’

সরকার বাংলাদেশকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি হচ্ছে লুটেরাদের ভাগ, যারা ক্ষমতার বলে জনগণের টাকা লুট করে খাচ্ছে, বাংলাদেশকে লুট করছে, শোষণ করছে। আরেক ভাগ সাধারণ মানুষ, যারা এসব লুটেরাদের খপ্পরে পড়ে কষ্টে দিনযাপন করছে। চট্টগ্রামে একটি টানেল হয়েছে। নদীর তলদেশে রাস্তা হাতেগোনা কয়েকটি দেশেই আছে। টানেল আমাদের দরকার, আমরাও খুশি। টানেলে আপত্তি নেই।’

বিজ্ঞাপন

‘কিন্তু আমার ৮০ ভাগ লোক ১০ টাকায় কেজি দরে চাল খেতে পারছে না। এই ৮০ ভাগ লোক যদি অসুস্থ হয়, তাহলে তাদের জন্য সরকারি হাসপাতাল করা হয় না, সরকারি স্কুল করা হয় না। গত ১৫ বছরে কয়টি সরকারি স্কুল, হাসপাতাল হয়েছে খোঁজ নেন। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার সবাইকে শোষণ করেছে, এখন ২২ হাজার পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। এরাই দেশের সব মানুষকে এখন শোষণ করছে।’

আওয়ামী লীগ ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সঙ্গে গোপনে গোপনে সন্ধি করে জোর করে ক্ষমতায় বসেছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জনগণের আন্দোলন সেদিন থেকে শুরু হয়েছে, এখনও চলছে। এই আন্দোলন দেশের মানুষকে মুক্ত করার, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আন্দোলন। আওয়ামী লীগকে বলতে চাই, দয়া করে খেলায় ক্ষান্ত দেন। অনেকদিন ক্ষমতায় ছিলেন। জনগণ ভোট দিলে আবার ক্ষমতায় আসবেন। দয়া করে জনগণকে একবার ভোট দেওয়ার সুযোগ দেন। না দিলে বাংলাদেশের জনগন জানে কি করে এটা আদায় করে নিতে হয়।’

‘বন্দুক দিয়ে, মামলা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। ১৯ জুলাই সারাদেশে বিএনপির এক দফা দাবিতে পদযাত্রা হবে। এটা মার্চ ফর ভিক্টোরি। অর্থাৎ বিজয়ের জন্য যাত্রা।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার ও এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর কমিটির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।

সারাবাংলা/আইসি/এনইউ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর