Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদেশিদের ওপর ভরসা কমছে, নির্বাচন নিয়ে নতুন ভাবনা বিএনপির

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুলাই ২০২৩ ২২:৩৭

ঢাকা: র‌্যাবের ওপর স্যাংশন, নতুন ভিসানীতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার ঢাকা সফর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের দৌড়-ঝাঁপের ফলে বিএনপিতে যে ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছিল, সেটা অনেকটা কমে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের ওপর আর ভরসা করতে পারছে না বিএনপি। সেজন্য নির্বাচন নিয়ে নতুনভাবে ভাবছে তারা।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রমতে, ডোনাল্ড লু ও উজরা জেয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম মূল্যায়ন বৈঠকে বসে। সেখানে দলটির নীতিনির্ধারকদের মূল্যায়নে যে বিষয়টি উঠে আসে, সেটি হলো— বিদেশিরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচনের কথা বলেছে, বাংদেশের মানবাধিকার ঠিক রাখার কথা বলেছে, গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতাসহ অবাধ সভা-সমাবেশের তাগিদ দিয়েছে, কিন্তু কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে নির্বাচন কাঠামো পরিবর্তন তথা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি। অধিকন্তু সরকার যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সেই প্রতিপূরণে সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া।

বিজ্ঞাপন

উজরা জেয়ার এই ঘোষণার পর সভা-সেমিনারে দেওয়া বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের ভাষণ-বক্তৃতায় হতাশার সুর ফুটে উঠতে শুরু করে। ১৪ জুলাই নোয়াখালীতে ‘মেহনতী মানুষের পদযাত্রা’য় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের ধার ধারি না।’

সূত্রমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের ‘টানাপোড়েন সম্পর্ক’ কাজে লাগিয়ে সরকারের ওপর ‘আন্তর্জাতিক চাপ’ বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছিল বিএনপি। তাদের ধারণা ছিল, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানি তেল, চাল-ডাল-আটা-ভোজ্যতেলের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে দুর্দশায় পড়া সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদেশদর্শী বা অনুদার নীতির কাছে সরকার আত্মসমপর্ণ করতে বাধ্য হবে। তাদের (বিএনপির) চাওয়া অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

কিন্তু, বিদেশিদের উঁচু মাত্রার কূটনীতি, আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আস্থা, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রতিবেশি দেশের মনোভাব— সবকিছু বোঝার পর গত এক সপ্তাহে বিএনপির রাজনীতির ভূগোলে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। এতদিন যারা মার্কিন ভিসানীতি, স্যাংশন, বিদেশিদের দৌড়-ঝাঁপ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আসছিল, এখন হঠাৎ করে তারা বলছে, ‘আমাদের দাবি আমাদের নিজেদেরই আদায় করতে হবে।’ তাদের ‘ভরসা’ আবার বিদেশিদের থেকে সরে ‘জগণের’ দিকে মোড় নিয়েছে। তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এবার জেগে উঠেছে। দাবি আদায়ে যা যা করা দরকার, সবই করবে বাংলাদেশের জনগণ।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন আর ভিসানীতি বা স্যাংশন নিয়ে ভাবছি না। ওইসব নিয়ে যাদের ভাবার তারাই ভাববেন। জনগণের শক্তিই আমাদের শক্তি। আমরা জনগণের জন্য আন্দোলন করছি, জনগণকে নিয়েই আন্দোলন করছি। এ আন্দোলন দেশ রক্ষার আন্দোলন। দেশর মানুষই এ আন্দোলনকে সফল করবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কখনও বিদেশিদের ওপর ভরসা করি না। আমাদের ভরসার জায়গা জনগণ। আমরা কখনও ভাবি না যে, কোন সরকারের অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে, সেটি বিদেশিরা ঠিক করে দেবে। বড়জোর কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে থেকে বিদেশিরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সেগুলো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।’

‘আমাদের দাবি আমাদেরই আদায় করতে হবে, আমাদের গণতন্ত্র আমাদেরই পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ জন্য আমরা সব বিরোধীদল একমত হয়ে রাজপথে আন্দোলন করছি। জনগণ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। রাজপথেই সব কিছুর ফায়সালা হবে’— বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

দলীয় সূত্রমতে, কেবল বিদেশিদের ইউটার্ন নয়, সরকারের পক্ষে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের খোলামেলা অবস্থানও বিএনপি নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। শনিবার (১৫ জুলাই) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা পরিষ্কার বলেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় দেখতে চান তারা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ভবিষ্যতেও শেখ হাসিনার সরকার দরকার।

অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে ৩১ জন ব্যবসায়ী বক্তব্য দেন। তাদের বেশির ভাগ সরাসরি বলেছেন, আগামী মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে চান তারা। কেউ কেউ পরোক্ষভাবে বলেছেন, কয়েকজন স্লোগানে স্লোগানে একই দাবি জানান।

এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির ‘নির্বাচন ভাবনায়’ গুরুত্ব পাচ্ছে শুধুই জনগণ। ১২ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টন সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম, ১৪ এপ্রিল নোয়াখালীতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রায় মানুষের ঢল, ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে দেশ বাঁচাতে শ্রমজীবী মানুষের জাগরণ শীর্ষক সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এবং ১৭ জুলাই খুলনায় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ দলীয় নেতাকর্মীর ব্যাপক সাড়া বিএনপিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে। ১৮ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশের মহানগর পর্যায়ে এবং পরদিন ১৯ জুলাই ঢাকার পদযাত্রা কর্মসূচিতে আরও বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিদেশিদের দেওয়া ‘আঘাত’ আর ব্যবসায়ীদের দেওয়া ‘ক্ষত’ মুছতে চায় বিএনপি। বিদেশ নির্ভরতা কাটিয়ে দলের নেতা-কর্মী সমর্থকদের নিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজপথেই করতে চায় তারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশিরা কি বলল, আর এফবিসিসিআই নেতারা কাকে ক্ষমতায় দেখতে চাইল, সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নাই। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথেই সব কিছুর ফায়সালা করব।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

ইইউ উজরা জেয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন চিন্তা নির্বাচন বিএনপি বিদেশ ভরসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর