চিকিৎসকদের কাছে জিম্মি রোগীরা
১৮ জুলাই ২০২৩ ১৫:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চেম্বারে প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও অস্ত্রোপচার বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রাম নগরীতে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। অনেকেই চেম্বারে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেছেন, আশায় ছিলেন শেষপর্যন্ত চিকিৎসকের ডাক পাবেন। কিন্তু হতাশা নিয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়েছে।
ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি চলছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) চট্টগ্রামেও অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখেছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) পর্যন্ত চলা এই প্রতিবাদ কর্মসূচি গতকাল সোমবার (১৭ জুলাই) থেকে শুরু হয়। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে সব হাসপাতালেই অপারেশন চালু রাখার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রামের বেসরকারি সিএইচসিআর, সেনসিভ, ল্যাব এক্সপার্টস ও ন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর চাপ একেবারেই কম। মাঝে মাঝে কেউ এলেও ডাক্তার না থাকায় ফেরত যাচ্ছেন। অভ্যর্থনা ডেস্কে থাকা কর্মচারীরা রোগীদের জিজ্ঞাসার জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। কোনো কোনো রোগীর স্বজনকে ডাক্তারদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে।
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী থেকে অসুস্থ বাবাকে ডাক্তার দেখাতে সকালে চট্টগ্রাম এসেছেন হুমায়ুন কবির। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে কোনো ডাক্তার না থাকায় বিপাকে পড়েন তিনি।
হুমায়ুন কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকালে প্রথমে সিএসসিআর গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো ডাক্তার ছিল না। আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেছি। কোথাও ভর্তি করাতে পারিনি। শেষে বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে আসি। এখানেও সিট পেলাম না, অনেক রোগী। অনেক কষ্টে ভর্তি করিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে শুইয়ে রেখেছি।’
ল্যাব এক্সপার্টে ডাক্তারের আসা রাশেদুল হক নামে এক রোগী সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক দূর থেকে এসেছি। ডাক্তার সময় দিয়েছিলো। কিন্তু এসে শুনলাম নাকি ডাক্তার দেখবেন না। রিসিপশন থেকে বললো ডাক্তারকে কল দিতে। কল দিতেই ডাক্তার আসবেন না বলে জানালেন। তাদের নাকি কী সব আন্দোলন চলছে, যদি আসে তিনি নাকি বিপদে পড়বেন।’
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান সারাবাংলাকে জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামেও দুইদিন সর্বস্তরের চিকিৎসকদের সকল প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে সব হাসপাতালেই অপারেশন চালু থাকবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে কেউই চেম্বারে বসছে না। কেউ না বসলে আমি তো আর বসতে পারি না। অনেক রোগী কল দিয়েছে। সবাইকে বুঝিয়ে সময় পরিবর্তন করছি। দুইটি অপারেশন ছিলো। সেগুলোও ক্যান্সেল করতে হয়েছে।’
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেড়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের ভিড় অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি দেখা গেছে।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ঠিকভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় সবাই চমেকে আসছে। এতে কিছুটা চাপ পড়ছে। তবে আমরা প্রস্তুত আছি সব সমস্যা মোকাবেলা করতে। গত রোববার (১৬ জুলাই) রাত ১২টা থেকে গতকাল সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাসপাতালে ৬৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। সন্ধ্যার পর রোগী বেশি ভর্তি হয়। তাই সন্ধ্যার পর কত রোগী ভর্তি হয়েছে বা চাপ আরও বেড়েছে কিনা সেটা কাল বলতে পারব।’
কর্মসূচির সমর্থনে সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামে মানববন্ধন-সমাবেশ করেছেন চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা। অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি), চট্টগ্রাম শাখার আয়োজনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকরা এ মানববন্ধন-সমাবেশ করেন।
সারাবাংলা/আইসি/এনএস