Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপিকে ‘ঘোড়ার ডিম’ দিলো আমেরিকা-ইইউ: ওবায়দুল কাদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুলাই ২০২৩ ১৯:২২

ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন বিএনপি ভুয়া। ওদের সব কথা ভুয়া। ওদের জোট ভুয়া। ওদের আন্দোলন ভুয়া। এই ভুয়া আন্দোলনের পরাজয় অনিবার্য। বিজয়যাত্রা তাদের বিফলে গেছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমেরিকা এসেছিল। বিএনপি ভেবেছিল আমেরিকানরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাইবে। তারা এলো, চলে গেল, দিয়ে গেল বিএনপিকে একটা ঘোড়ার ডিম, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ের প্রতিনিধিরা দিলো ঘোড়ার ডিম।’

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট (আইইবি)’র সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আজকের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে দুপুর ১টার পর থেকে নেতাকর্মীরা খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপসহ বাদ্য বাজনায় পিকআপ, মিনি ট্রাক, ঘোড়ার গাড়িসহ উৎসবমুখর পরিবেশে স্লোগান দিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। আইইবির গেটে সামনে দুইটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল আজ কী বলেছেন? তাদের পদযাত্রা নাকি গণযাত্রা, বিজয়যাত্রা। আসলে তাদের পদযাত্রা পরাজয় যাত্রা, এটি তাদের পতনযাত্রা।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক হবে না। পার্লামেন্টের বিলুপ্তি হবে না। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের নেত্রী দুনিয়ার অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালন করবে।’

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘মিথ্যাচার করেন? বিষোদগার করেন, যতই করেন কোনো লাভ হবে না। আমরা আমেরিকানদের বলেছি, ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের বলেছি, বাংলাদেশে আমরা শান্তি চাই, নির্বাচনের আগে শান্তি চাই, নির্বাচনে শান্তি চাই, নির্বাচনের পরে আমরা শান্তি চাই।’

‘তত্ত্বাবধায়ক কেউ চায় না, চায়’ বিএনপি অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এরা মনে করছে ২০০১ আর ২০০৬ সাল; এই দুই সময়ের মতো তাদের দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আসবে। ওই সরকার দিয়ে ইলেকশনে করে তারা জিতে যাবে। বিএনপির সেই আশা গুড়েবালি। তারা যা চেয়েছে কোনোদিনও হবে না। তত্ত্বাবধায়ক আদালত মেরে ফেলেছে। আমরা কিছু করিনি। তত্ত্বাবধায়ক আমরা বাতিল করিনি। বাতিল করেছে দেশের উচ্চ আদালত। ওরা তো আদালত মানে না, আইন মানে না, বিচার মানে না। নিজের পক্ষে না হলে কিছুই মানে না। বিএনপি মার্কা তত্ত্বাবধায়ক আমরা চাই না। বিএনপি মার্কা নির্বাচনকালীন সরকার আমরা মানি না।’

বিএনপিকে সংবিধান মতো নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দফা আমাদেরও এক একটা আছে। আমাদের দফা বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধানে যা লেখা আছে সেটাই আমরা নির্বাচনে প্রয়োগ করব। নির্বাচন কমিশন সেভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচন করবে। এর বাইরে এক চুলও আমরা নড়ব না। যত কিছুই করেন। মারামারি-পাল্টাপাল্টির হুমকি…..। আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি মানুষের পার্টি, বঙ্গবন্ধুর পার্টি। শেখ হাসিনার পার্টি, এই পার্টি কারো কাছে মাথা নত করে না।’

এবারও খেলা হবে খেলা হবে স্লোগান পুনর্ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যত শয়তানের দল আছে, বাংলাদেশের সব শয়তানের দলের আসল ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। শয়তানের ৩৬টি দল মিলিত হইছে, কয়দিন থাকবে? ছিল ৫৪, নামতে নামতে ৩৬, কয়দিন বলে ৩৭ আবার বলে ৩৬। দফা একটা, আবার বলে ৩২টা। তাদের দফার ঠিক নেই, ঐক্যের ঠিক নেই। আজ এক ঐক্য, কাল আরেক ঐক্য গড়ে উঠবে।’

রাষ্ট্র মেরামত বিএনপিকে করতে হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুতের নামে খাম্বা দিয়েছেন। এটি হলো আপনাদের মেরামত।’

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রসঙ্গ তুলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এখন সারাদেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। এই দ্রব্যমূল্যও আস্তে আস্তে কমে যাবে। আপনারা ধৈর্য ধরুন। বিএনপির ওপর ভর করবেন না। বিএনপি ঘোড়ার ডিম ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না।’

সরকারের মেয়াদে অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন। এ সময় তিনি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল, একদিনে একশোটি সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক উদ্বোধন করাসহ প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আগামী মাসে আরও একশো সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। সামনের কয় মাস উদ্বোধন আর উদ্বোধন। ওই যে গাজীপুরের রাস্তা ওই রাস্তাও এর মধ্যে উদ্বোধন হয়ে যাবে। যেখানে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট। তারপরও তেজগাঁও রেল স্টেশন থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেয়ের উদ্বোধন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিজিক্যালি গিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সতর্ক থাকবেন। আপনারা ধৈর্য্য ধরবেন। আওয়ামী লীগের কর্মীদের বলব, তারা বুঝে গেছে আগামী ইলেকশনে জেতার কোনো সম্ভাবনা নাই। বিএনপির ফখরুল বুঝে গতবারের মতো এবারও হারবে। এখন ফখরুল বলে কি আওয়ামী লীগ ৩০টার বেশি সিট পাবে না। কয়েকদিন আগে বলেছে ১০টা। যাক ফখরুল সাহেব ধন্যবাদ। ২০টা এর মধ্যে বেড়ে গেছে। এখন বলে ৩০টা। আমাদেরকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই ৩০টা (আসন) আপনাদের দেশনেত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনে পাবলিক দেখাইয়া দিছে ৩০ সিট বিএনপির আর বাকি সিট শেখ হাসিনার।’

শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার জনতার সঙ্গে,বিশেষ করে বুড়াদের সঙ্গে আমাদের তরুণরা যেভাবে মিছিলে নামছে, বিএনপির কোনো উপায় নাই। এই তরুণরা প্রথমবার তারা ভোটার হয়েছে। তারা শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে এবারে ভোট দেবে।’

‘২০৩০ সালের মধ্যে বিএনপি নাকি ডিজিটাল করবে। বিএনপির সেই ৩০ সালের স্বপ্ন ডীপ ফ্রীজে আবদ্ধ হয়ে আছে। এখন আর বলে না। জানে যে করতে পারবে না। তাদের ২০৩০ সালের স্বপ্ন ভুয়া। এই দলের সব স্বপ্ন ভুয়া। হাতি ঘোড়া গেল তল ভেড়া বলে কত জল, বিএনপির অবস্থা হয়েছে তাই- বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে গোলমাল করবেন না। আমি সবাইকে বলছি, আমাদের ধৈর্য ধরার সময়। আমরা বিজয়ী হব, আমরা কেন গোলমাল করব? আমরা বিজয়ী হব, পরিবেশ যত শান্ত থাকবে আমাদের তত সুবিধা। কাজেই পরিবেশ যেন অশান্ত না হয়। কারও উসকানিতে আপনারা সাড়া দেবেন না। চুপচাপ নিজেদের প্রোগ্রাম চালিয়ে যাবেন।’

বিএপিরকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা গায়ে পরে ঝগড়া বাজাবে। ভরা কলসি নড়ে না। নড়ে খালি কলসি। বিএনপির কলসি খালি হয়ে গেছে। ওই কলসি নড়ছে। আমাদের শেখ হাসিনার কলসি উন্নয়নের কলসি। ভরা কলসি, এই কলসি নড়ে না। আপনারা কেন নড়বেন? কেউই নড়বেন না। কাউকে কিছু বলবেন না। কেউ অন্যায় করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা আমাদের পার্টির কর্মীদের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কর্মী বানাতে চাই। পাল্টাপাল্টির দরকার নাই। আমাদের ওপর আক্রমণ হলে ওই পরিস্থিতিই বলে দেবে, আমরা কী করব? তখন কার কী কর্তব্য। নিজেরা নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।’

পরে নৌকা নৌকা শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা স্লোগান দিয়ে উন্নয়ন শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিএনপির পদযাত্রার পাল্টা কর্মসূচি হিসাবে রাজধানীতে সতর্ক অবস্থানে থাকার কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ।

ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সমানে সমাবেশ শেষে উন্নয়ন শোভাযাত্রা শুরু হয়। শাহবাগ এলিফ্যান্ট রোড ও সিটি কলেজের সড়ক হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বুধবারও বিকেল তিনটায় তেজগাঁওতে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্ব সভা পরিচালনা করেন সাধাারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম,সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদের টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর