Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ল্যাপটপের ছোঁয়ায় মিটছে জ্ঞানপিপাসা

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুলাই ২০২৩ ২২:৩১

ঠাকুরগাঁও থেকে ফিরে: ’আগে কখনওই ল্যাপটপ ধরে দেখার সুযোগ পাইনি। বাড়িতে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার নেই। বাসায় স্মার্ট টিভি থাকলেও ওয়াইফাই নেই। স্কুলের ল্যাবে এখন ল্যাপটপ ধরতে পারছি, ছুঁয়ে দেখতে পারছি। এখন ল্যাপটপ চালানোও শিখে গেছি। কম্পিউটার চালানো যেহেতু শিখেই গেছি, সব সার্চ করে জানতে পারি। এখন যে কোনো প্রশ্ন, আমাদের মনে তো আর একটা প্রশ্ন নেই, হাজার হাজার প্রশ্ন, ওগুলোর উত্তরগুলো এখান থেকেই পেয়ে যাই। ল্যাপটপ চালিয়ে এখন অজানা সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই।’

বিজ্ঞাপন

কথাগুলো ঠাকুরগাঁওয়ের ঠাকুরগাঁও রোড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কার। প্রায় একই রকম তথ্য জানায় অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও। তারা এখন টাইপিং থেকে শুরু করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে জানে। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের ওই স্কুলটি ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

স্কুলটির অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা। তার বাবা হোমিও ডাক্তার। তাদের বাড়িতেও ল্যাপটপ বা কম্পিটার নেই। ক্ষুদে এই শিক্ষার্থী জানায়, ল্যাবে ক্লাস করতে পেরে তার খুবই ভালো লাগে। আগে ওই স্কুলে ল্যাব ছিল না। ল্যাব হওয়ার পর স্কুলকে আরও উন্নত লাগছে। ল্যাবে বসে তারা নতুন অনেক কিছুই শিখতে পারছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম আক্তার মামনি জানায়, ল্যাবে বসে সে তার নিজের জিমেইল একাউন্ট নিজেই খুলেছে। এখন সে ইংরেজিতে টাইপ করতে জানে। এই শিক্ষার্থী আরও জানায়, সপ্তাহে তিন দিন তারা ল্যাবে ক্লাস করার সুযোগ পায়। ইন্টারনেট ব্রাউজসহ কম্পিউটারের খুটিনাটি শেখানো হচ্ছে তাদের।

মৌমিতা খানম নামের অষ্টম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমি অনুভব করতে পারছি, আমিও ল্যাপটপ চালাতে পারি। অনুভুতিটা অনেক ভালোই। আমার থেকেও যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তারা এখানে কম্পিটার ধরার সুযোগ পাচ্ছে। এখন কম্পিটার শেখাটা খুব জরুরি। স্কুলে আমরা এখন সেই সুযোগ পাচ্ছি।’ এই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী রাশিদা আক্তার রাশু ভাষ্য— ‘আগে কম্পিউটারের কিছুই জানতাম না। কখনও কম্পিউটার ধরেও দেখিনি। এখন আমি কম্পিউটার অন-অফ করতে পারি। নিজের জিমেইল একাউন্টে ডুকতে পারি। এখানে অনেক কিছু শেখানো হচ্ছে। শেখার চেষ্টা করছি।’

বিজ্ঞাপন

এই স্কুলেরই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কা। তার বাবা পেশায় স্বর্ণকার, মা গৃহিনী। প্রিয়াঙ্কার ভাষায়— ‘বাসায় টিভি আছে কিন্তু ওয়াইফাই নেই। ওর জন্যে সার্চ দিয়ে কোনো কিছু জানা যায় না। স্কুলে আসতেছি, মার কাছে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর চাই, মা কিন্তু সহজে ওগুলো দিতে পারে না। আর বাবা বাসায় থাকে না, কাজে থাকেন, সময় পাই না। এই সময় আর আমি করতাম, স্কুলে এখন কম্পিউটার দিয়েছে। স্যার-ম্যাডামের কাছেও ততোটা সময় থাকেনা, সব সময় ক্লাস নিচ্ছেন। স্কুলে এখন কম্পিউটার চালানো শিখিয়েছে। কম্পিউটার চালানো যেহেতু শিখেই গেছি, সব সার্চ করে জানতে পারি। এটাই সুবিধা। যে কোনো প্রশ্ন, আমাদের মনে তো আর একটা প্রশ্ন নেই, হাজার হাজার প্রশ্ন, ওগুলোর উত্তরগুলো এখান থেকেই পেয়ে যায়।’

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর আমাদের স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন হাতে কলমে কম্পিউটার শেখার সুযোগ পাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগের বাসায় ল্যাপটপ বা কম্পিউার নেই। তারা এখন কম্পিউটার ও ইন্টানেটের ছোঁয়ায় ভবিষ্যতের স্মার্ট নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠছে। নিজেরা ধীরে ধীরে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের খুঁটিনাটি শেখায় ভবিষ্যতে তা তাদের কাজে লাগবে। বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ করে দিয়েছে।

জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে, ‘বাড়িতে অনেকেকের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নেই। কিন্তু সে এখানে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাচ্ছে। এখানে যারা আইসিটি শিক্ষক আছেন, অন্য শিক্ষক যারা আইসিটি জ্ঞান সম্পন্ন তাদেরকেও আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যে কারণে কম্পিউটারের বেসিক যে বিষয়গুলো আছে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তারা প্রতিদিনই বাই রোটেশনে প্র্যাকটিস করার সুযোগটা পাচ্ছে। প্রায় সবারই ঘরে স্মার্টফোন রয়েছে। কম্পউটারের যে ধারণা তার সঙ্গে স্মার্টফোনের কিছু কিছু মিলও রয়েছে। এই মিলগুলো তারা যদি কাজে লাগায় বা লাগাতে পারে তাহলে কিন্তু তাদের কম্পিউটার দক্ষতা ভালো ভাবেই কাজে লাগানো সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ক্ষুদে এই শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার নলেজ ভবিষ্যতের জন্য খুবই ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে।’

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের ঠাকুরগাঁও রোড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২২ সালে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্কুলের মতো সেখানেও এই ল্যাব স্থাপন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

ঠাকুরগাঁও শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ে বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৯৯ টি। এরমধ্যে ৬৪৩ টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে। ১২৬টি স্কুলে কম্পিউটার কম্পিউটার ল্যাব বা শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। ডিজিটাল স্মার্ট ক্লাসরুম রয়েছে ১৩১টিতে। জেলাটিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৭৫ টি। ৮৯৭টি বিদ্যালয়ে ওয়াই-ফাই সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এর সবই হয়েছে বর্তমান সরকারের গত কয়েক বছরে। আর গত দেড় দশকে জেলাটিতে শিক্ষার সব সূচকেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

আরও পড়ুন
নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আরও আলোকিত ঠাকুরগাঁও
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর: পাল্টে গেছে উত্তরের জনপদ
পঞ্চগড়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে এখন রেল

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

ঠাকুরগাঁও ল্যাপটপ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর