বাগেরহাটে কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভুট্টা
১২ মে ২০১৮ ০৮:১৫
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
বাগেরহাট: জেলার মোরলগঞ্জ উপজেলার কালিকাবাড়ি গ্রাম। লবন পানির কারণে ধান চাষ দিনকে দিন কমে আসায় খাদ্য ভাণ্ডারে যখন টান পড়ার যোগাড় তখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে ভুট্টা চাষ। রোগবালাই কম হওয়ায় খুব কম সময়েই ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য কৃষক। তারা বলছেন, ফলনে সময় বেশি লাগলেও ফসল নষ্ট কম হয়, লাভও হয় বেশি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, আগে যেখানে কৃষকদের ভুট্টা চাষ সম্পর্কে বোঝাতে মাঠ কর্মীদের পরিশ্রম করতে হত সেখানে কৃষকরা নিজ উদ্যোগেই ভুট্টা চাষ করছেন। প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে কৃষি অফিসে আসছেন। দিন দিন ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে উপজেলা জুড়ে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, ৩-৪ বছর আগে এ উপজেলায় ভুট্টা চাষির সংখ্যা অনেক কম ছিল। ওই সময় হাতে গোনা ১০ থেকে ১২ জন চাষি ভুট্টা চাষ করতো। কিন্তু সেই অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। গত মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয় ৩০ হেক্টর জমিতে। আর এ মৌসুমে ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
উপ-সহকারী এই কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, মোরেলগঞ্জ উপজেলার বলইবুনিয়া, আলতিবুরুজবাড়ীয়া ও হোগলাবুনিয়া গ্রামের জমিতে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
কালিকা বাড়ী গ্রামের ভুট্টা চাষী সারাফাত আলী জানান, তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। ৫০ শতক জমিতে ভুট্টা আবাদ করতে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও পরিচর্যা বাবদ তার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শতক প্রতি তিনি এক থেকে দেড় মণ করে ভুট্টা পাবেন। ফলন ভাল হলে সে হিসেবে সারাফাত আলী ৫০ শতকে কমপক্ষে ৫০ মণ ভুট্টা পাওয়ার আশা করছেন। বাজারে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা মণ দরে ভুট্টা বিক্রি হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে দোনা গ্রামের ভুট্টা চাষি শহিদুল ইসলাম, সিরাজ উদ্দিন, আব্দুর রশিদ , আমবাড়ীয়া গ্রামের সুবাস মন্ডল সহ একাধিক চাষি জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম। কারণ ভুট্টায় রোগ-বালাই খুব কম হয়। চারা লাগানো থেকে শুরু করে ৫ মাসের মধ্যে ভুট্টার ফলন পাওয়া যায়। খরচ বাদে প্রায় অর্ধেক লাভ থাকে। বাজার ভাল হলে লাভও বেশি হয়।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনুপম রায় বলেন, ‘ বলইবুনিয়া, হোগলাবুনিয়া ও দৈবজ্ঞহাটী এলাকায় ভুট্টার আবাদ বেশি হয়। চলতি মৌসুমে ৩৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে সাড়ে ৫০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হেক্টর জমিতে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ভুট্টায় তেমন একটা রোগ-বালাই হয় না। তাই ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম আবার লাভও ভাল হয়। যার কারণে আগের থেকে ভুট্টা চাষে চাষীদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। এ মৌসুমে প্রায় ৪৫০ জন চাষি ভুট্টার আবাদ করেছেন।
ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়াতে ১৩০ জন চাষিকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কৃষিবিদ অনুপম রায় বলেন, এসব চাষীদের বিনামূল্যে ২ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ৩০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভুট্টার ওপর ৩৫টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমএস/এমআইএস
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook