নৌকার প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা, জবাবে বিএনপি অফিস ভাংচুর
১৯ জুলাই ২০২৩ ১৯:১০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির পদযাত্রা শেষে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু’র নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা, প্রচারণার গাড়ি ও যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভাংচুর শেষে চলে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা একটি বাস আটকে কয়েকজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
হামলা-ভাংচুরের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পাশাপাশি নগরীর নুর আহমদ সড়কে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করেছে।
বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেলে নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজারে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের মূল গেইটের বিপরীতে প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলার এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ১০০ গজের মধ্যেই দামপাড়া পুলিশ লাইনে নগর পুলিশের সদর দফতর।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রচার সেলের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারণায় ছিলাম। সেখানে খবর পাই, বিএনপির পদযাত্রা শেষে লালখান বাজারে আমাদের যে মূল নির্বাচনি কার্যালয় আছে, সেখানে হামলা হয়েছে। কার্যালয়ে সেসময় নেতাদের মধ্যে কেউ ছিলেন না। কয়েকজন কর্মী ছিল। এ সুযোগে বিএনপির নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করে।’
প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী সারাবাংলাকে জানান, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে লালখান বাজারে নির্বাচনি কার্যালয়ের সামনে দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা হেঁটে যাচ্ছিলেন। আকস্মিকভাবে নির্বাচনি কার্যালয় লক্ষ্য করে তারা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। কয়েকজন ভেতরে গিয়ে প্রচারণার কয়েকটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে ও চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করে।
এ ছাড়া কার্যালয়ের সামনে রাখা নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্ত কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেন। এরপর তারা সড়কেও যানবাহন ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে আসতে থাকলে তারা চলে যায়।
একই সময়ে আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের ওপর থেকেও নির্বাচনি কার্যালয় ও সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়াসার মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের রিজার্ভ বাস দাঁড়ানো ছিল। পদযাত্রা শেষ করে কিছু নেতাকর্মী সেই বাসে ওঠার জন্য যাচ্ছিল। তারা অতর্কিতে নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুর শুরু করে। আমাদের প্রচারণার একটি পাজেরো, একটি প্রাইভেট কার ও ১০-১৫টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। এরপর সড়কেও তারা নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুর করে। সব মিলিয়ে ২৫টিরও বেশি যানবাহন তারা ভাংচুর করেছে।’
‘খবর পেয়ে আমরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা একত্র হয়ে জিইসি মোড় থেকে দ্রুত ওয়াসার মোড়ের দিকে এগোতে থাকলে তারা বাসে উঠে পালানোর চেষ্টা করে। তখন আমরা ব্যারিকেড দিয়ে বাসটি আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। বাসে থাকা হামলাকারীরা নিজেদের উত্তর জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।’
এদিকে হামলা-ভাংচুরের প্রতিবাদে লালখান বাজার মোড় থেকে ওয়াসার মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা স্লোগান দিয়ে হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের দিকে এগোতে থাকে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমার নেতৃত্বে কর্মকর্তারা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। নাসিমন ভবনের সামনে মিছিল আসার পর পুলিশ তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কয়েক’শ নেতাকর্মী পুলিশের বাধা এড়িয়ে ভেতরে ঢুকে যান।
বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে আসবাবপত্র ভাংচুরের পাশাপাশি সেখানে ও এর আশপাশে ঝোলানো ব্যানারগুলো তারা ছিঁড়ে ফেলেন। পরে নাসিমন ভবনের সামনে সড়কে ব্যানার জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেন।
বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ভাংচুর শেষে চলে যাওয়ার পর আরেক গ্রুপের নেতাকর্মীরা নগরীর নন্দনকানন থেকে মিছিল নিয়ে নাসিমন ভবনের সামনে আসেন। সেখানে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমকে দেখা গেছে। তারা নাসিমন ভবনের ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দিয়েছে।
সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নুর আহমদ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এরপর পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল বিকেল ৩টা থেকে। সেটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। কিন্তু পদযাত্রা শেষে বিএনপি নেতাকর্মীরা চলে যাওয়ার পথে ওয়াসার মোড়ে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যালয়ে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তখন উভয়পক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বিএনপি অফিসে এসেছেন। আমর কঠোর অবস্থানে ছিলাম। তারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সামগ্রিক ঘটনা তদন্ত করে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
তবে এসব ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন উপ পুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান।
সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে সমাবেশ ও পদযাত্রা করে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। এতে প্রধান অতিথির ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বুধবার বিকেলে বিকেলে নগরীর নুর আহম্মদ সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পদযাত্রা নিয়ে নেতাকর্মীরা নিউমার্কেট, কদমতলী হয়ে দেওয়ানহাট পর্যন্ত যান।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম
আওয়ামী লীগ নির্বাচনি কার্যালয় নৌকার প্রার্থী পদযাত্রা বিএনপি হামলা