ঢাকা: মান-সম্মান রাখতে চাইলে আন্দোলন ছেড়ে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আমেরিকা বলে গেছে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের নিয়মে নির্বাচনের কথা ইউরোপও বলেছে। সেজন্য বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিএনপির চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে।
বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার’ পূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। পরে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় থেকে সাতরাস্তা থেকে তিব্বত, নাবিস্কো হয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত শোভাযাত্রা হয়।
দুপুর ১টা থেকে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় অংশ নিতে মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে উপস্থিত হতে শুরু করে। শোভাযাত্রা সফল করতে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীদের ঢল নামে। এতে করে তেজগাঁও, সাতরাস্তা থেকে বিভিন্ন এলাকায় যানজট ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
বিএনপিকে জনতার ঢল দেখতে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাত রাস্তায় আসুন। জনতার ঢল কাকে বলে দেখে যান। মানুষ আর মানুষ। লক্ষ লোকের সমাবেশ। এক অভুতপূর্ব বিস্ময়। আজকের এই সভাই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ কী চায়, কাকে চায়। কাকে চায়, শেখ হাসিনা-বাংলাদেশ।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আসল খবর হচ্ছে, বিএনপির নেতারা আশার মালা গেঁথে প্রহর গুনেছে; কখন আসবে উজরা জেয়া? কখন আসবে ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা? সেই আশার মালা গেঁথে বসে ছিল। চোখে মুখে আনন্দের ধারা। ইউরোপ এলো, এখনো যায়নি। আমেরিকান প্রতিনিধি এসে আবার চলে গেল। বিএনপি যা শুনতে চেয়েছিল, বিএনপি তাদের মুখে যা জানতে চেয়েছিল তা পায়নি। তাই তাদের চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে। গলার পানি শুকিয়ে গেছে। এখন আর বিএনপির সেই আনন্দ নেই। শুকনো মুখ, শুকনো চোখ। মির্জা ফখরুল আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের আমেরিকা বলে দিয়েছে- তত্ত্বাবধায়ক কি? আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়েছিল হাসিনা ছাড়া নির্বাচন। আমেরিকা বলে গেছে বাংলাদেশের নিয়ম সংবিধান অনুযায়ী হবে। সংবিধানের নিয়মের কথা ইউরোপও বলেছে, আমেরিকাও বলেছে। বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের শক্তি যখন কমে তখন তার মুখের বিষ বেড়ে যায়। ফখরুলের গলা নষ্ট, কিন্তু গাল থেকে বের হচ্ছে দুনিয়ার যত গালিগালাজ, যত বিচ্ছিরি কথা। বিএনপি নেতারা বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে পর্যন্ত সম্মান দিতে জানে না। একটু মান-সম্মান নিয়ে কথা বলে না। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।’
বিএনপির আশা পূরণ হয়নি জানিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এখন সব দোষ শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। সেটাই তাদের জ্বালা। এমনি পদ্মা সেতুর জ্বালায় মরে। হায়রে জ্বালা! পদ্মা সেতু করেই ফেলল। আড়াই ঘণ্টায় বরিশাল, তিন ঘণ্টায় খুলনা।’
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘হায়রে জ্বালা, অন্তর্জ্বালা! মরে কে বিএনপি? এইসব দেখে বুঝে ফেলেছে নির্বাচনে কি হবে? নির্বাচনে হেরে যাওয়ার এই কথা ভাবতেই তাদের মন খারাপ। সেই জন্য পদযাত্রা করতে গিয়ে বাংলা কলেজে হামলা করে, খাগড়াছড়িতে হামলা করে। পদযাত্রা করতে গিয়ে স্কুলের ছাত্রীদের বগুড়ায় ককটেল মারে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা মাথা গরম করবেন না। ওদের মাথা গরম। ওরা এখন পায়ে পা রেখে ঝগড়া করতে চায়। আপনারা ওসব করবেন না। আমরা ক্ষমতায়, আমরা জেতা পার্টি। আমরা কেন গোলমাল করব? আমরা শান্তি চাই, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। শান্তি যত থাকবে, আমাদের ভোট তত বাড়বে।’
ফাইনাল খেলা ডিসেম্বরে হবে জানিয়ে পুনরায় ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ স্লোগান ধরেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জনগণের শক্তি একদিকে, আরেকদিকে সন্ত্রাস আর অস্ত্র। রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন সন্ত্রাসের পথ বেঁচে নিয়েছে। প্রতিরোধ করতে হবে এদের। প্রতিহত করতে হবে এদের। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, ইলেকশনে আসুন। যদিও নির্বাচনে আসা, না আসা আপনাদের বিষয়। কিন্তু নির্বাচনে বাধা দিতে আসবেন না। আমরা জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করব। নির্বাচনে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।’
এ সময় বিএনপির দফা, দাবি-দাওয়া, জোটসহ সব ভুয়া ভুয়া বলেও স্লোগান ধরেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘মান সম্মান রাখতে চাইলে আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে আসুন। না হয় মান-সম্মান থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের মানসম্মান রাখবে না। গতবার তো পাইছেন ৭টা! এবার অবস্থা কী হবে আল্লাহই জানে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। শোভাযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।