Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যক্তিগত বিরোধে সজীব খুন, লাশ নিয়ে ‘অপরাজনীতি’ বিএনপির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ জুলাই ২০২৩ ১৭:৩০

ঢাকা: আর্থিক লেনদেন ও বিয়ে সংক্রান্ত ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের যুবক সজিব হোসেন। আর নিরীহ যুবক সজিবের লাশ নিয়ে অপরাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই, পুরোটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

প্রাথমিক সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, সজিব হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। বিএনপি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে তার সত্যতা মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানিয়েছে, ব্যক্তিগত টাকা পয়সা লেনদেনের বিবাদ নিয়ে সজিবকে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি কোপায় চার-পাঁচজন যুবক। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে প্রাণ হারান সজিব।

সজিব হত্যার ঘটনাটিকে নিয়ে অপরাজনীতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাফুজজ্জামান আশরাফ বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যাননি। নিহত সজিব মারা গেছেন ছুরিকাঘাতে। এ হত্যার নেপথ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত বিরোধ।’

সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে জেলা পুলিশ সুপার জানান, ব্যক্তিগত অর্থ লেনদেনের বিরোধে সজিবকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে চার থেকে পাঁচজন যুবক। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে— মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সজিব দৌড়ে নগরীর মদিন উল্লাহ হাউজিংয়ের একটি বাসার ঢুকছেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে সজিব ফ্লাটের মালিক নোমানকে জানিয়েছিলেন, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সুপার জানান, এর আগে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশকে ঘটনা জানানো হয়েছিল। পরে পুলিশ সেই বাসার সামনে থেকে সজিবের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সিসিটিভি ফুটেজে সজিবের রক্তাক্ত দেহ ও মারা যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। তার শরীরে চারটি কোপের চিহ্ন পেয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি বিএনপির কোনো মিছিলে অংশ নেননি। এ ছাড়া তিনি রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

সজীবের স্বজনদের আহাজারি

সজীবের স্বজনদের আহাজারি

এই হত্যাকাণ্ড অরাজনৈতিক: পুলিশ বলছে, এ হত্যাকাণ্ড অরাজনৈতিক। পুলিশ বা কারও গুলিতে নয়, ধারালো অস্ত্র বা ছুরির আঘাতে সজিবের মৃত্যু হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীর সঙ্গে সংঘর্ষের স্থান থেকে আনুমানিক আড়াই কিলোমিটার দূরে সজীব দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। মূল সড়ক থেকে দেড়শ গজ দূরে কলেজ রোডের ফিরোজা টাওয়ার গলির মুখে ৪-৫ জন সজীবকে ছুরিকাঘাত করে।

হামলার একপর্যায়ে নিজেকে রক্ষার জন্য দৌড়ে ফিরোজা টাওয়ার ভবনের দোতলার ভাড়াটিয়া নোমান হোসেনের ফ্ল্যাটের সামনে পড়ে যান সজীব। সেখানে ফ্ল্যাটের মালিক নোমানকে মুমূর্ষু অবস্থায় সজীব জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসেননি। পাওনা টাকা ও বিয়ে-সংক্রান্ত জটিলতায় হামলার শিকার হয়েছেন।

অপরাজনীতি বিএনপির: এদিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় খুন হওয়া সজিবের লাশ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি। কেউ তাকে বলছে কৃষকদলের কর্মী, কেউ ছাত্রদলের কর্মী। নিজেদের কর্মী বলে গুজব রটিয়ে সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছে দলটির নেতারা ও বিএনপি’র ‘গুজব সেল’।

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: এদিকে একই ঘটনায় বিএনপির সংবাদ সম্মলনে নিহত ব্যক্তিকে কৃষক দলের চরশাহী ইউনিয়ন কমিটির সদস্য বলে দাবি করা হয়। নিহত সজীব চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।

জেলা বিএনপি আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, পদযাত্রায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা শহরের বশিরভিলার দিকে আসতে থাকেন। পথে পথে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে পড়েন তারা। বিকেলে যখন পদযাত্রা শুরু করি, তখন সামাদ মোড় এলাকায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আমাদের লোকজনের ওপর চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে আমাদের কৃষক দলের একজন নেতা নিহত হন।

তিনি বলেন, যিনি নিহত হয়েছেন, তিনি আমাদের চরশাহী ইউনিয়নের কৃষক দলের সদস্য। তার বাড়ি সদরের চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্যাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু তাহের। তাকে ধাওয়া করে মদিন উল্যা হাউজিংয়ের সামনে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষের ছবি

লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষের ছবি

বিচার চায় আওয়ামী লীগ: এদিকে সজীব হত্যার বিচার দাবি করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। বুধবার বিকেলে শহরের দলীয় অস্থায়ী কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগ আহূত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিচার দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘একজন পথচারী ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। খবর নিয়ে জানা গেছে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তিনি একজন টাইলস মিস্ত্রি। কর্মসূচি চলাকালে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় নিহত হওয়ার পরে গভীর রাতে বিএনপি তাকে নিজেদের দলীয় কর্মী দাবি করে ঘটনাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগকে দায়ী করার অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপি হত্যার ষড়যন্ত্রে মেতেছে।’

পথচারীর লাশ নিয়ে এখন রাজনীতি করছে বিএনপি। আর সে হত্যার দায় আওয়ামী লীগের ওপর দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন।

সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ মামলা: লক্ষ্মীপুরে এক দফা দাবিতে পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি ও কৃষকদলের এক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে পুলিশ ২টি মামলার বাদী। এ ছাড়া, নিহত সজীব হোসেনের (২৫) বড় ভাই সুজন হোসেন ১টি এবং একজন আইনজীবী আরেকটি মামলা করেন।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. মোসলেহ উদ্দিন জানান, নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আনিসুজ্জামান।

পুলিশ আরেকটি মামলা করেছে পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগে। মামলার বাদী একই থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক।

পুলিশের করা দুটি মামলাতেই জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

তৃতীয় মামলার বাদী নিহত সজিবের বড় ভাই সুজন।এ মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করা হলেও সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।

চতুর্থ মামলার বাদী আইনজীবী নুরুল আমিন রাজু। বসত বাড়িতে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় এ মামলা করেন তিনি।

ওসি জানান, ৪টি মামলায় মোট আসামি ৩ হাজার ৮০৫ জন। তাদের মধ্যে ৫৫ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামি ৩ হাজার ৭৫০ জন। তবে এখনও কোনো আসামি গ্রেফতার হননি।

এর আগে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুরে পদযাত্রা করে জেলা বিএনপি। এ সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

এর আগে মঙ্গলবার বিকালে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে শহরের সামাদ মোড় সংলগ্ন কলেজ রোডের পুকুর পাড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর মদিন উল্লাহ হাউজিংয়ের একটি বাসার সামনে থেকে সজিব হোসেনর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর নিহত সজিবকে দলের কর্মী বলে প্রচার করে বিএনপি।

সারাবাংলা/একে

আওয়ামী লীগ লক্ষ্মীপুর সজীব খুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর