ঢামেক হাসপাতালে রোগীর চাপ, জায়গা স্বল্পতায় ডেঙ্গু কর্নার নয়
২০ জুলাই ২০২৩ ২০:১১
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন ৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে ২৩৩ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। রোগীর চাপ বাড়লেও জায়গা স্বল্পতার কারণে এখনই ডেঙ্গু কর্নার খোলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) হাসপাতালের ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভেতর-বাইরে পা রাখার জায়গা নেই। অন্যান্য রোগীর সঙ্গে মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে।
মিরপুর থেকে আসা মজিবর রহমান জানান, লিভার জটিলতার কারণে তার স্বজন নতুন ভবনের সাততলায় ভর্তি হয়েছেন। ওই ফ্লোরে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হতে পারে বলেও আশঙ্কা তার।
মায়মুনা নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তারা সাভার থেকে এসেছেন। তার রোগীর রক্তে ইনফেকশন ধরা পড়েছে। হাসপাতালে প্রতি ইউনিটেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। তারা মশারি ব্যবহার করেন না। হাসপাতালে মশার কয়েল ব্যবহারও নিষিদ্ধ। ডেঙ্গু রোগীদের মাধ্যমে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা মায়মুনার।
নতুন ভবনের ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ নার্সিং অফিসার নাসরিন হোসাইন বলেন, ‘হাসপাতালে এখনও ডেঙ্গু কর্নার করা হয়নি। প্রতিটি ইউনিটে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগী আছে। এতে আমাদের চিকিৎসা দিতে অনেক কষ্ট হয়। রোগীরাও সমস্যায় পড়ে। তবে হাসপাতালে অন্যান্য রোগীরও অনেক চাপ আছে। আলাদা ডেঙ্গু কর্নার করার মতো জায়গা নেই।’
হাসপাতালের প্যাথলোজি বিভাগের প্রধান ডা. আজিজ আমেদ খান বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন আউটডোর ইনডোর মিলে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগীর ডেঙ্গু টেস্ট হচ্ছে। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা খারাপ তারাই ভর্তি হচ্ছে। প্যাথলোজিতে গত মাসের তুলনায় অতিরিক্ত রোগীর চাপ।’
তবে আমাদের কিছু স্টাফদের কারণে অনেক সময় রিপোর্ট নিতে রোগীরা কষ্ট হয়। তবে রোগীদের আগেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। আগে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। সঙ্গে প্লেটলেট পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি প্লেটলেট ৫০ হাজারের কম হয় তবে তবে মেডিসিন বিশষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ‘
ডা.আজিজ বলেন, ‘আমাদের প্যাথলোজিতে ২৪ ঘণ্টা এনএস ওয়ান পরীক্ষা হচ্ছে। আইজিজি/আইজিএম পরীক্ষাও হচ্ছে। রোগীদের আগে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। সঙ্গে প্লেটলেট পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি প্লেটলেট ৫০ হাজারের কম হয় তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালে রোগীর তুলনায় বেড সংখ্যা সীমিত। এরমধ্যে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু রোগীর বাড়তি চাপ। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৬৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা এই হাসপাতালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির রেকর্ড।’
তিনি জানান, জুলাই মাসেই এই হাসপাতালে ৯৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
ডেঙ্গু কর্নার চালুর বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমাদের জায়গা স্বল্পতা রয়েছে। এই কারণে আমরা আলাদাভাবে ডেঙ্গু কর্নার খুলতে পারিনি। তবে প্রয়োজন হলে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হবে।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘ঘরে ঘরে ডেঙ্গু হচ্ছে। সবার আগে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হওয়া দরকার। বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
সারাবাংলা/এসএসআর/একে