‘দেশ, ইসলাম ও ঈমান বাঁচানোর আন্দোলন করতে হবে’
২১ জুলাই ২০২৩ ১৭:৫১
ঢাকা: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, দেশে জালেম ও স্বৈরাচার জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে। এই জালেম ও মিথ্যাচারদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, ইসলাম ও ঈমান বাঁচানোর আন্দোলন করতে হবে।’
শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে ডিপ্লোম ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনস্টিটিউশনে আয়োজিত ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘মুসলমানদের দেশে হিন্দুত্বকে প্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত করছে।’
মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি মুক্ত হয়নি। বাংলাদেশকে মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা কাজ করবেন।’
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে একটি পক্ষ মুক্তিযুদ্ধকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে হলে ইসলামী রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’
১১ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে ১১ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করেন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বাংলাদেশের সদস্য সচিব আবুল কাশেম। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অনুযায়ী ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
২. ৫২ বছরে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ লুটেরা, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ ও সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দুর্নীতি দুঃশাসন, লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সিন্ডিকেট মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দেশের ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক নেতা পীর সাহেব চরমোনাই এর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য।
৩. অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন।
৪. নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশীশক্তির ব্যাবহার নিষিদ্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
৫. ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ওপর ভোটের দিনে একাধিকবার হামলার সঙ্গে জড়িত ও পরিকল্পনাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।
৬. রাজনীতিকদের লাগামহীন আক্রমণাত্মক বক্তব্য পরিহার করে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ আয়োজনের সুযোগ।
৭. ভিক্ষুক ও কর্মহীনদের পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
৮. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মজুদদার ও ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ।
৯. উন্নয়নের নামে সরকারদলীয় ঠিকাদার ও সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লুটপাট করা রাষ্ট্রীয় অর্থ সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন।
১০. বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা।
১১. রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির প্রভাব বন্ধ।
সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমকে সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াদুদকে সহ-সভাপতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানকে সেক্রেটারি জেনারেল করে ২০২৩-২০২৫ মেয়াদে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধা সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, সিনিয়র নায়েবে আমির মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মনির হোসেন, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, ইসলামী আইনজীবী পরিষদ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, ইসলামী যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সভাপতি শরীফুল ইসলাম রিয়াদ, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির, মুহাম্মাদ নুরুজ্জামান সরকারসহ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস