‘নির্দলীয় সরকার ছাড়া এবার কোনো নির্বাচন হবে না’
২২ জুলাই ২০২৩ ২২:১২
ঢাকা: নির্দলীয় সরকার ছাড়া এবার দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২২ জুলাই) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ওদের লক্ষ্য একটাই যে, মানুষকে ভয় দেখিয়ে, জনগণকে ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা। এবার রাতের অন্ধকার না, এবার তারা নতুন নতুন কৌশল করেছে। সব ডিসি-এসপি পছন্দমতো নিয়োগ দিচ্ছে। উদ্দেশ্য কী? দিনের আলোয় সিল মেরে আবার নিয়ে যাবে। কিন্তু বন্ধুগণ, বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার আর সেটি হবে না। এবার নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, আমরা ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎভাবে ঘোষণা দিয়েছি যে, আমরা বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন চাই। সেজন্য কী চাই? অবিলম্বে এই শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভয় পায় বলে আজকে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এরা ভীরু কাপুরুষ সরকার, নির্বাচনকে ভয় পায়। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা এক দফা দাবি দিয়েছি। বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল প্রায় সমস্বরে বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।’
‘এই যে জাতীয় পার্টি, যারা পার্লামেন্টে আছে তারা পর্যন্ত পরিষ্কার করে বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, এই ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) তাদের পীরসাহেব পরিষ্কার করে বলেছেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও বলেছে, অন্যান্য দলও বলেছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ দশটা আসনও পাবে না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কাল বিলম্ব না করে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করুন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুনভাবে নির্বাচন করুন।’
ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবার ভোটের কী আলামত? আমরা সেইদিন দেখলাম ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের আসনে। বেচারা হিরো আলম। বাচ্চা ছেলে। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি, সে একটি আশা নিয়ে গিয়েছিল অন্তত তাকে ভোটটা করতে দেবে। কিন্তু এটি যে আওয়ামী লীগ, এটা বেচারা হিরো আলম বুঝতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সেই দল, সেই সন্ত্রাসী সংগঠন, যে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না। তারা কথা বলাও সহ্য করতে পারে না, কেউ তার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াবে তাও সহ্য করতে পারে না। ওরা মনে করে, এটি তাদের তালুকদারি। অথচ এই দেশ ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া।’
ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে দেখেন ঢাকায় ডেঙ্গুর কী অবস্থা। ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে সিট নেই। মশা মারার কোনো চেষ্টা এদের নাই। মশা মারবে কোথায়? মশা মারার জন্য যে ব্যবস্থা নিতে হবে, তারা তো ব্যস্ত হয়ে আছে কীভাবে টাকা পাচার করবে বিদেশে।’
যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান প্রমুখ।
তারুণ্যের এই সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব এবং সম্পাদকমণ্ডলীর কোনো সদস্য বক্তব্য দেননি। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই প্রাধান্য পেয়েছে তারুণ্যের এই সমাবেশে।
সারাবাংলা/এজেড/একে