Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তেল খালাসের নতুন যুগে প্রবেশ করছে দেশ

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ জুলাই ২০২৩ ২৩:৩৭

কক্সবাজার (মহেশখালী) থেকে: অপরিশোধিত তেল খালাসের নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গভীর সমুদ্র থেকে আর লাইটারেজ জাহাজে নয়, এখন পাইপলাইনের মাধ্যমেই মহেশখালিতে অপরিশোধিত তেল নিয়ে আসা হবে। পরে তা পরিশোধন হবে সেখানেই। আগে যেখানে তেল খালাসে ১১ দিনের মতো সময় লাগত, এখন তা সম্ভব হবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। এতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে সরকারের। ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হবে।

বিজ্ঞাপন

আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হলে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় এসপিএম প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শেষ হয়েছে প্রায় সব কাজই। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষার পালা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তেল খালাসের জন্যে নির্মাণ করা হয়েছে বিশালাকার ৬টি ট্যাংক। বসানো হয়েছে তেলের বড় বড় পাইপলাইন৷ তেল শোধনাগার যন্ত্রও প্রস্তুত। প্রকল্প এলাকায় প্রস্তুত রয়েছে কন্টেনারও। এখন কেবল পাইপলাইনে তেল পরিশোধনের যাত্রা শুরুর অপেক্ষা।

প্রকল্প সূত্র জানা গেছে, ৯৭ ভাগ কাজই শেষ হয়েছে। প্রথম কমিশনিংয়ে কিছুটা যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ায় ফের কমিশনিং শেষে আগস্টের শেষ দিকে কিংবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে ডাবল পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল খালাস প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শুরু হবে। আর এর মাধ্যমেই তেল খালাসের নতুন যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী শান্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে কমিশনিং হবে। আর তা শেষ হলেই এ প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এর মধ্য দিয়েই পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালস প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী শান্ত বলেন, ‘প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। ১৯১ একর জমির ওপর নির্মিত এই প্রকল্পটির ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের যে কোনো সময় এটি চালু হতে পারে। আগে যেখানে জাহাজ ভর্তি অপরিশোধিত তেলগুলো আসত সেই তেল মাদার ব্যাসেল থেকে লাইটারিং করে চট্টগ্রামে নেওয়া হতো। এতে ১০ থেকে ১১ দিন সময় লাগার পাশাপাশি অনেক আর্থিক ব্যয় হতো। প্রকল্পটি থেকে ১৫ কিলোমিটার ভিতরে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং(এসপিএম) বয়াতে মাদার ব্যাসেল মুরিং করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা একটি জাহাজ খালাস করতে পারবো। সেখান থেকে তেলগুলো আমরা তিনটি ফিনিশ ও তিনটি ক্রুড ট্যাংকে রেখে সেখান থেকে আমরা তেলগুলো সরবরাহ করতে পারব। এতে করে বছরে আমাদের ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এখানে বছরে ৯ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল খালাস করা যাবে।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের উত্তরে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটির টেস্টিং এর কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছোট একটি দুর্ঘটনার কারণে দেরি হচ্ছে। এর একটি প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা শীঘ্রই এই বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য আলাদা একটি কোম্পানি হতে যাচ্ছে। এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে এখানে।’

মহেশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি একটি জাতীয় প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। প্রকল্প কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে এই প্রকল্প চালু হলে ৮শ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আর এই ৮০০ কোটি টাকা আমাদের রিজার্ভে যুক্ত হবে। প্রকল্প ঘিরে তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থানও।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে ডাবল পাইপলাইনের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে হাতে নেয় সরকার। এই প্রকল্পে মহেশখালী দ্বীপে স্থাপন করা হয়েছে পৃথক পৃথক ক্রুড ও ডিজেল স্টোরেজের ট্যাংক। আর এসপিএম বয়া স্থাপন করা হয়েছে মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগরে, যেখানে বিদেশ থেকে তেল এনে নোঙর করে রাখে বড় বড় জাহাজ। এই বয়া সংলগ্ন জাহাজ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল এনে জমা রাখা হবে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে। পরবর্তীতে স্টোরেজ ট্যাংক থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী ক্রস করে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ভেতর দিয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বিভিন্ন কোম্পানির স্টোরেজ ট্যাংকে জমা করে সারাদেশে সরবরাহ করা হবে।

জানা গেছে, ১৯১ একর জমিতে গড়ে উঠেছে প্রকল্পটি। প্রকল্পের ৬টি স্টোরেজ ট্যাংকের মধ্যে ৩টি ক্রুড অয়েল (প্রতিটির নেট ধারণক্ষমতা ৫০ হাজার ঘন মিটার) ও ৩টি ডিজেল ট্যাংক (৩০ হাজার ঘন মিটার) রয়েছে। স্টোরেজ ট্যাংকগুলো সমতল থেকে প্রায় ২০ ফিট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে বন্যা কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্টোরেজ ট্যাংকে পানি উঠতে না পারে। এসপিএম থেকে ৩৬ ব্যাসার্ধের ২টি পৃথক পাইপলাইন গিয়ে মিলিত হয়েছে গভীর বঙ্গোপসাগরের বয়াতে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা এই উপজেলায় প্রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে থাকে। তাই প্রায় দেড় শ’ বছরের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে এখানে স্টোরেজ ট্যাংকগুলো স্থাপন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে তেল খালাসের পরিবহন খরচ ও অপচয় হ্রাস পাবে। এতে প্রতিবছর সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এছাড়া আনলোডিংয়ের সময়ে যে তেল অপচয় হতো, তাও শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

কক্সবাজার তেল খালাস

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর