‘পরিকল্পিত উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’
২৩ জুলাই ২০২৩ ০০:২১
ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাইরের দেশে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য অনেক পরিকল্পনাবিদ কাজ করেন। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংখ্যা নগণ্য। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য নগর পরিকল্পনাবিদদের অন্তর্ভুক্তির কোনো বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সাফল্যের সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করছে।
শনিবার (২২ জুলাই) নগর দুর্যোগ ঝুঁকি ও করণীয়: প্রেক্ষিত ঢাকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত এই গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বিআইপি’র প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন। বৈঠক সঞ্চালনা পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।
আলোচনায় উঠে আসে, বিশ্বের ৫০ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যা নগরে বসবাস করছে। উন্নয়নশীল দেশে যা আরও বাড়ছে। বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) অনুসারে, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশটির ৮০ ভাগ জনসংখ্যা নগরে বসবাস করবে। তবে শঙ্কার বিষয় হলো- বাংলাদেশের এই দ্রুত নগরায়নের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে দেশের রাজধানী ঢাকার উপর। বিবিএস ২০১১ অনুযায়ী, নগরে বসবাসরত জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ঢাকায় বসবাস করছে। যা আরও বেড়েছে।
বর্তমান ড্যাপ অনুযায়ী, ঢাকার জনঘনত্ব প্রতি একরে ৩০০-৮০০ জন, যা নগরকে ঘনবসতিপূর্ণ করে তুলেছে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে, নগরের প্রায় ৭৩ শতাংশ অবকাঠামোই অপরিকল্পিত। এছাড়াও, ইউএন-হ্যাবিট্যাট’র প্রকাশনা থেকে পাওয়া গেছে যে, ঢাকায় পাবলিক স্পেস ও রাস্তার জন্য বরাদ্দকৃত জমির পরিমাণ মাত্র ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এসব কারণ নগর দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিশাল অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
সভার মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. রাকিব আহসান এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. মো. শাকিল আখতার। তাদের উপস্থাপনায় উচ্চ জনঘনত্ব ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ঢাকার দুর্যোগ ঝুঁকি বেশি উল্লেখ করে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড, জলাবদ্ধতা, ভূমিকস্পের মতো আরও বিভিন্ন দুর্যোগের সম্মুখীন হওয়ার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে ঢাকার।’
বংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ২০১৩ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ১৫-১৮ শতাংশ ঢাকায় সংঘটিত, যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। জানুয়ারি ২০২৩ থেকে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ৩৫টি, যার মধ্যে বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট অগ্নিকাণ্ড, সিদ্দিক বাজার এর বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের মতো আরও অনেকগুলো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী নগরবাসী। এফএসসিডি কর্তৃক ২০১৭ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। যেখানে ঢাকায় অগ্নিকাণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার ৬৫১টি।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘ড্যাপের বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত জমিতে খোলা জায়গা বা পুকুর থাকলে সেটা বাঁচাতে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সংশোধনী ড্যাপে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, ছয় ফিট রাস্তা হলেই ভবন করা যাবে না। এক্ষেত্রে ভবন মালিককে ২০ ফিট রাস্তার জমি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (সিটি কর্পোরেশনকে) দেওয়ার পরে ভবন তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে। বর্তমান সরকারি ভবনগুলো ফায়ার হাইড্রান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি ঠিক মতো রিচার্জ হচ্ছে না। যা এই নগরের ভূমিকম্প ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।’
রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘ইউআরপি প্রোজেক্ট এ ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। কীভাবে তা ড্যাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায় তার জন্য কর্মশালা চলমান রয়েছে এবং ওই ম্যাপ প্রকাশ করা হবে। ফলে ঝুঁকিপুর্ণ জমিতে ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনা করে ডিজাইন করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, যে ৭৩% ভবন অপরিকল্পিতভাবে হয়েছে, সে সম্পর্কে কী করা হবে তার জন্য কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আলোচনার প্রেক্ষিতে ২৫-৫০টি তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে যারা ঢাকা মহানগরে ঐ ভবনগুলো নির্ধারণের জন্য যাচাই করবে। এছাড়াও যে ভবনগুলো নতুন করে নির্মাণ করা হবে, তাতে রাজউক কর্তৃক যেন নিয়মিত মনিটর করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানির অপ্রতুলতা দূরীকরণে নগর উপঅঞ্চলগুলোতে ওয়াটার পার্ক বাড়ানোর কার্যক্রম চলমান আছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্স’র অধ্যক্ষ মো. ছালেহ উদ্দিন, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক—দক্ষিণ) এস. এম. মেহেদী হাসান, ঢাকা ওয়াসার ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ওয়াজ উদ্দিন, জাইকা’র সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ (সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট) মারি মিউরা, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল এবং ডিএনসিসি, ডেসকো ও তিতাসের প্রতিনিধিরা।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম