Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছিন্নমূল মানুষদের সামাজিক ক্ষমতায়নের উদ্যোগ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ জুলাই ২০২৩ ১০:০৫

ঢাকা: দেশের পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জ জেলার ছিন্নমূল মানুষদের সামাজিক ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রায় ২১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসা হবে বলে আশা করছেন সংশিষ্টরা।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণায় থেকে প্রস্তাবিত ‘সুনামগঞ্জ জেলার এতিম, সুবিধাবঞ্চিত ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সামাজিক ক্ষমতায়’ শীর্ষক প্রকল্পটি নিয়ে গত ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী। গত ১২ জুলাই জারি করা হয়েছে ওই সভার কার্যবিবরণী। সেখানে প্রকল্প প্রস্তাবের বিভিন্ন ক্রুটি তুলে ধরা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. মাহবুবুল ইসলাম পিইসি সভায় বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারির জন্য অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিত ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীদের পুনর্বাসন ও জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বেসরকারি প্রচেষ্টায় আর্থ-সামাজিক খাতে নেওয়া প্রকল্পের সীমিত আকারে সাহায্যে দেওয়ার জন্য সংশোধিত নীতিমালার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজ সেবা অধিদফতর ও বেসরকারি সংস্থা মাটির যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৬ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং প্রত্যাশী সংস্থার অনুদান থেকে ৪ কোটি ১৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত মেয়াদ চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।’

বিজ্ঞাপন

যুগ্ম প্রধান আরও বলেন, ‘প্রকল্পটির ওপর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের পদ বা জনবল নির্ধারণ কমিটি জনবলের সুপারিশও নেওয়া হয়নি। বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী অর্থায়ন পরিকল্পনা সংক্রান্ত ছক-৭ এবং আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়ে প্রত্যাশি সংস্থার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়নি। সমাজ সেবা অধিদফতর প্রকল্প এলাকায় কাজ করার নিবন্ধন সনদও নেই। প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে কিছুটা পরিবর্তিত নামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই।’

প্রত্যাশী সংস্থা ‘মাটি’র সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামীণ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের জন্য কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়াকন্ডিশনিং এবং ডেইরি ফার্ম ম্যানেজমেন্ট কোর্সের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং উন্নত জাতের গাভীপালনের মাধ্যমে কর্মদক্ষ ও আত্মনির্ভরশীল করে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে ৮০০ জন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া ও আয়বর্ধক কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।’

সভায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বলেন, এনইসি সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য এনএসডিএ কাজ করছে। সব ধরনের প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণধর্মী প্রকল্প সব দফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য নীতিমালাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এনইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি থেকে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ অঙ্গটি বাদ দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য এলাকার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের আয়বর্ধক কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সীমিত পরিসরে উপকারভোগীদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এ ধরনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিধি-বিধানের বাইরে কোর্স সমন্বয়ক, কোর্স পরিচালক, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইত্যাদি বাবদ কোনো ব্যয় রাখা যাবে না বলে সভায় পরামর্শ দেওয়া হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেন, উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়নি। তবে প্রকল্প অনুমোদনের পর উপকারভোগী নির্বাচন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতেৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে উপকারভোগী নির্বাচন এবং প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে।

সভায় কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় নিড অ্যাসেসমেন্ট করে আয়বর্ধক কর্মসূচি নির্ধারণ এবং উপকারভোগী নির্বাচন করা সমীচীন হবে। প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করে প্রকল্প এলাকায় নিড অ্যাসেসমেন্ট ভিত্তিতে আয়বর্ধক কর্মসূচি নির্বাচন করার বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।

পিইসি সভার সিদ্ধান্ত: সব পক্ষের আলাপ আলোচনার পর যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- চলতি বছরের ১ মার্চ অনুষ্ঠিত এনইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ অঙ্গটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) থেকে বাদ দিতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য আয়বর্ধক কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে প্রকল্পের আয়বর্ধক কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সীমিত পরিসরে উপকারভোগীদের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এছাড়া প্রত্যাশিত সংস্থা মাটি’র প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতার কর্মঅভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ অভিজ্ঞতার সনদ পুর্নগঠিত ডিপিপিতে যুক্ত করতে হবে। প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা প্রদান করতে হবে। এছাড়া প্রতিটি আয়বর্ধক কর্মসূচী নির্বাচনের যৌক্তিকতাও তুলে ধরতে হবে।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

ছিন্নমূল মানুষ সামাজিক ক্ষমতায়ন সুনামগঞ্জ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর