জাকিরের মনোনয়ন সহজ হবে না, জাপার চেয়ে শক্ত প্রার্থী জেপিতে
২৫ জুলাই ২০২৩ ২১:৩৭
ঢাকা: একসময় কুড়িগ্রাম ছিল জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। এই জেলার সবক’টি আসনই তাদের দখলে থাকতো। কিন্তু এখন সেই চিত্র আর নেই। টানা মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেছে জেলার তিনটি আসন। সেজন্য মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের চেয়ে শক্ত। তবে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বও রয়েছে প্রবল। আর আসনগুলোতে বিএনপির একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় তারাও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন। এদিকে, জাতীয় পার্টি তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে এবার মরণ কামড় দেবে— এমন আলোচনা রাজনৈতিক মহলে। আর কুড়িগ্রামে চরমোনাইর পীরের অনেক অনুসারী থাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোটের মাঠে তারাও ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে।
নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে কুড়িগ্রামের চারটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। মাঠে-ঘাটে ভোটের উত্তাপ বইতে শুরু করেছে। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীর দোষ-গুণ নিয়ে আলোচনা। এদিকে, মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পরিচিতি বাড়াতে নিজের ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ডিজিটাল ব্যানার লাগিয়ে সরগরম করে তুলছে ভোটের মাঠ। সেইসঙ্গে মনোনয়নের জন্য দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তদবিরও রক্ষা করে চলছেন তারা। ফলে দলে বাড়ছে গ্রুপিং-লবিং।
কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী আংশিক, উলিপুর আংশিক) জেলা শহর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এই আসনটির মতো আর কোনো আসন এত বেশি ভাঙ্গা-গড়ার কবলে পড়েনি। এটি জাতীয় সংসদীয় ২৮ নম্বর আসন। এই আসনটি বর্তমানে আওয়ামী লীগের দখলে। এখান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. জাকির হোসেন বর্তমান সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। একসময় এই আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি ছিল। এখন সে অবস্থা নেই। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারেও অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। বর্তমান এমপি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নামেও রয়েছে নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি নাকি স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কোনো গুরুত্বই দেন না।
এদিকে, বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে খুশি এই এলাকার মানুষ। সাধারণ ভোটাররা চান যোগ্য এক নেতা। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের লুটপাট আর ভাগবাটোয়ারায় অতিষ্ঠ তারা। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও ক্ষুদ্ধ হয়ে আছেন ওইসব নেতাদের ওপর। দলের অনেক নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটাররা জানান, ভালো একজন প্রার্থী দিতে হবে, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই। যিনি দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দেবেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না, এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন— এমন ব্যক্তিকে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন দিলে অনায়সে জিতে যাবে।
আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়ন দৌড়ে আছেন তারা হলেন- বর্তমান এমপি মো. জাকির হোসেন, কুড়িগ্রাম বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, মো. বিপ্লব হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শফিউল আলম, হাজী মো. মুরাদ লতিফ, রেজাউল করিম মিনু। বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার কারণে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও হয়নি। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের প্রভাবের কারণেই এমনটি হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা দ্রত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন। ক্লিন ইমেজের এই মানুষটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার উন্নয়ন ও জনসংযোগ করে যচ্ছেন। প্রত্যন্ত এই এলাকার অবহেলিত মানুষদের তিনি আইনি সহায়তা দিয়ে আসছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। যদি মনোনয়ন পাই তাহলে এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নোয়নে বহুমুখী কাজ করব।’
আরও পড়ুন:
- আ.লীগে দ্বন্দ্ব বিএনপির প্রায় নিশ্চিত, প্রার্থী সংকটে জাপা
- জাপার পনিরের শক্ত অবস্থানে দখল নিতে চায় আ.লীগ প্রার্থী
- আসন পুনরুদ্ধারে জাপার ভরসা মোস্তাকেই, আ.লীগ-বিএনপিতে কোন্দল
কুড়িগ্রাম-৪ আসনটি এককালে জাতীয় পার্টির দূর্গ ছিল। এ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি ছিল পর পর তিন বার। কিন্তু আগের মতো অবস্থা এখন আর নেই। মূলত হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যু ও স্থানীয়ভাবে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে জাতীয় পার্টি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাছাড়া দলের সাংগঠনিক অবস্থাও ভালো নয়। তবে ১৪ দলীয় জোট থেকে যদি লাঙ্গলের প্রার্থী দেয় সেক্ষেত্রে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আসনে দল থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন আনোয়ার হোসেন ও সাইফুর রহমান বাবলু।
এ ছাড়া জাতীয় পাটি (মঞ্জু)- জেপির প্রার্থী রুহুল আমিন এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। যদিও দলটির কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই এখানে। শুধুমাত্র পারিবারিক কারণে রুহুল আমিনের ওই অবস্থান। কেননা তার বড় ভাই গোলাম হোসেন জাতীয় পার্টি থেকে (লাঙ্গল) পর পর দুই বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর রুহুল আমিন একাধিকবার রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এমনকি একবার জেপি থেকে এমপিও হন। আগামী নির্বাচনে তাই তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই ভাবা হচ্ছে।
এদিকে, এই আসনে বিএনপি কখনই সুবিধা করতে পারেনি। আসনটিতে বিএনপি কেবলমাত্র ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে জয়লাভ করে। এখানে বিএনপির চেয়ে জামায়াতের ভোট কিছুটা বেশি ধরা হয়। যে কারণে এই আসনটি ২০০১ সাল থেকে প্রতিবারই জামায়াতকে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু এবার বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। যদি দল নির্বাচনে যায় তাহলে মনোনয়ন চাইতে পারেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজিজার রহমান, রাজিবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোখলেছুর রহমান, চিলমারী উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারী, রৌমারী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রনজু, সহসভাপতি আবুল হাশেম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঈমান আলী এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হোসেন লিপি।
উল্লেখ্য, এই আসনে বর্তমানে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ১১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪১ হাজার ৮০৩ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩১৪ জন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন বর্তমান জাকির হোসেন। তিনি ওই সময় ভোট পান ৭৩ হাজার ৯১৩টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির গোলাম হাবিব দুলালের ভোট ছিল ৫৩ হাজার ৬৮২টি। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাকির হোসেন জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) প্রার্থী রুহুল আমিনের কাছে হেরে যান। ওই নির্বাচনে রুহুল আমিন পান ৩২ হাজার ৬০৭ ভোট। আর জাকির হোসেন পান ২৪ হাজার ৯৩৯ ভোট। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাকির হোসেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আজিজুর রহমানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৫ হাজার ১৮৯টি।
সারাবাংলা/জেআই/পিটিএম
অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন আজিজার রহমান কুড়িগ্রাম-৪ আসন জাকির হোসেন জাতীয় পাটি (মঞ্জু)- জেপির প্রার্থী রুহুল আমিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন