‘মাই লর্ড’র পরিবর্তে ‘ইউর অনার/স্যার’ বললে অসম্মান হবে না
২৬ জুলাই ২০২৩ ০০:০৩
ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চের বিচারপতিদের মাই লর্ড সম্বোধনের পরিবর্তে ইউর অনার/স্যার সম্বোধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের মাই লর্ড’র পরিবর্তে ইউর অনার বা স্যার সম্বোধন করলে কোনো অসম্মান হবে না।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। এর পর এদিন দুপুরের পর ওই কোর্টের দরজায় বিচারপতিদের মাই লর্ড সম্মোধন না করতে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি (বিজয়-৭১ ভবনের কোর্ট নং-১৭) সেঁটে দেওয়া হয়।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অত্র বেঞ্চে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীদের ‘মাই লর্ড’র স্থলে ইউর অনার/স্যার সম্মোধন করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
আদেশের পর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, ‘আজ বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন এবং বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারপতিদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে মাই লর্ড’র স্থলে ইউর অনার বা স্যার সম্বোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা শুধুমাত্র এই বেঞ্চের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।’
এর আগে, এদিন সকালে মামলার শুনানি চলাকালে আইনজীবীরা যখন মাই লর্ড সম্বোধন করে শুনানি করছিল তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের মাই লর্ড সম্বোধন করার প্রয়োজন নাই। এটা ব্রিটিশদের রেওয়াজ (কাস্টমস) ছিল। সেই প্রভুরা কি এখনও আছে?
তখন আদালতে উপস্থিত থাকা আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল জ্যেষ্ঠ বিচারপতির কাছে জানতে চান, ‘তাহলে আমরা কী সম্বোধন করব?’ তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ‘ইউর অনার বা স্যার সম্বোধন করবেন। এটা শুধু আমাদের বেঞ্চের জন্য প্রযোজ্য হবে।’ এরপর আদালতের দ্বিতীয় বিচারপতির মতামত নিয়ে এ বিষয়ে বেঞ্চ অফিসারকে নির্দেশনা দেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের বিচাপতিদের মাই লর্ড সম্বোধনের বিষয়ে ১৯৮২ সালের ১০ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নির্দেশে রেজিস্ট্রার নাঈম উদ্দিন আহমেদ একটি নোটিশ জারি করেছিলেন।’
ওই নোটিশের ভাষ্য ছিল, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আশা প্রকাশ করেন যে, ১৯৮২ সালের ১০ অক্টোবর তারিখ থেকে প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগ এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের ‘মাই লর্ড’ বা ‘ইউর লর্ডশিপ’র পরিবর্তে ‘ইউর অনার’ বলে সম্বোধন করা উচিত।
তবে পরবর্তীতে আইনজীবীরা তা প্র্যাকটিস করেননি। সেই নোটিশের আলোকেই বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষও বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন আদালত।
আজ আদালত বলেছেন, ব্রিটিশদের প্রথা (কাস্টমস) পরিবর্তন হওয়া দরকার। এখনতো প্রভুরা (লর্ড শব্দের অর্থ প্রভু) নাই। এই অবস্থায় আমাদের ‘মাই লর্ড’ না বলে ইউর অনার কিংবা স্যার সম্বোধন করলে অসম্মানজনক হবে না। ইউর অনার বা স্যার সম্বোধন করাটাই সমুচীন হবে। ১৯৮২ সালের সেই নোটিশের আলোকে বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষেরও বিষয়টি আমলে নেওয়ার সুযোগ আছে।
আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন মুসলমান হিসেবে মাই লর্ড সম্বোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে লর্ড (লর্ড এর বাংলা অর্থ প্রভু) শব্দটি ব্যবহারে মাঝে মাঝে আমার কাছে বিব্রতকর মনে হয়। আর মাই লর্ড সম্বোধনের সঙ্গে আদালতের সম্মান বৃদ্ধি বা হানি এর কোনোটারই সম্পর্ক নাই। আমি মনে করি, আদালতের আজকের সিদ্ধান্তে অধিকাংশ আইনজীবী খুশিই হয়েছেন। আর তাদের খুশি হওয়ার বিষয়টি অনেক আইনজীবীকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শেয়ার করতে দেখা যাচ্ছে।’
বিচারপতিদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে মাই লর্ড’র পরিবর্তে ইউর অনার বা স্যার করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রখ্যাত আইনজীবী শাহদীন মালিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা সেনসেটিভ বিষয়। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলা ঠিক হবে না।’
তবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিচারপতিদের মাই লর্ড সম্বোধন করাটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাই লর্ড বলার প্র্যাকটিস এখনও প্রচলিত আছে। আর একটি বেঞ্চের নির্দেশনা অনুযায়ী সেই বেঞ্চে মাই লর্ড’র স্থলে ইউর অনার/স্যার সম্মোধন করাটাও দোষের কিছু নেই। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট/বার থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, আইনজীবীরা সেটাই মেনে চলবেন। এই নিয়ে বিতর্কেরও কিছু নাই।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম