ঢাকা: কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীর সাজা পুনঃনির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্ট এর প্রথম অংশের ৪, ৫ ও ৭ ধারা এবং দ্বিতীয় অংশের ৮ ধারা মোতাবেক হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। এবং আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওইদিন এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা করেছেন আদালত।
বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতির রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। আর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
এর আগে গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট, ১৯৮৭-এর অধ্যায় ২, ধারা ৮ অনুযায়ী অভিযুক্তদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সময়ে বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস–পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না।
বহিষ্কার শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা (সেশন: ২০১৭-১৮), চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি (সেশন ২০২০-২১), আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম (সেশন: ২০২০-২১), ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম (সেশন: ২০২০-২১) ও একই বিভাগের একই সেশনের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তারা ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখেন।
এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
পরে বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এ ঘটনায় গত ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। আদালত শুনানি নিয়ে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
হাইকোর্ট গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে (ভিসি) এ বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়। উক্ত কমিটিতে একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, একজন নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে রাখতে বলা হয়। এবং তাদের সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ভিসির প্রতি নির্দেশ দেন।
দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর কয়েক দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন আদালত। এবং নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িক বহিষ্কার করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। এ ঘটনায় হলের প্রাধ্যক্ষ শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করতে বলেন আদালত।
এরপর গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট, ১৯৮৭-এর অধ্যায় ২, ধারা ৮ অনুযায়ী অভিযুক্তদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।