Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট

আজাহারুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুলাই ২০২৩ ২২:৩৭

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী হলে গণরুমে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ৫ ছাত্রীর এক বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশে ‘সন্তুষ্ট নন’ হাইকোর্ট। ফলে এই আদেশ বাতিল করে পুনরায় সাজা নির্ধারণের জন্য উপাচার্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

বুধবার (২৬ জুলাই) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এসময় তাদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আইনি অজ্ঞতা বা ইচ্ছাকৃত অবহেলা ছিল বলে উল্লেখ করেছেন বিচারপতিরা। গত ১৯ জুলাইয়ের শুনানিতে পাঁচ ছাত্রীকে এক বছরের বহিষ্কারের আদেশ বিধিসম্মত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ১৫ জুলাই ছাত্রী নির্যাতনে জড়িত বহিষ্কৃত শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধির দ্বিতীয় ভাগের ৮ ধারা অনুযায়ী তাদের বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। তবে এ সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ভূক্তভোগী, রিটকারী আইনজীবী, ইবি শাখা ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা জড়িতদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

হাইকোর্ট সূত্র জানায়, ইবিতে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার মামলায় ভূক্তভোগীর পক্ষে করা রিটকারী আইনজীবী ছিলেন গাজী মো. মহসিন।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন শাহ মঞ্জুরুল হক। শুনানি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এক বছরের বহিষ্কারাদেশের বিষয়টি তুলে ধরেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৮৭ সালের কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী আপরাধীদের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেন। এর কারণ হিসেবে আইনগত অজ্ঞতা, ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা, অপরাধীদের পক্ষ নেওয়া অথবা অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা থাকতে পারে বলে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন।

রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আইন রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি স্থায়ী বহিষ্কারের বিধান রয়েছে। বিচারপতিরা কোড অব কন্ডাক্টের (আচরণবিধি) প্রথম ভাগের ৪, ৫, ৭ এবং দ্বিতীয় ভাগের ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যবস্থা নিয়ে আগামী ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এদিকে শুনানির শেষ পর্যায়ে শাহ মঞ্জুরুল হক শিক্ষার্থীদের যে শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিয়েছে এটা যাতে আর না বাড়ানো হয় তার জন্য সুপারিশ করেন। তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘আইনে যা আছে, সে অনুযায়ী শাস্তি হবে। আর এর মাধ্যমে আমরা সমাজে একটা মেসেজ দিতে চাই, এ ধরনের অপরাধ করলে মানুষ ছাড় পায় না।’

নির্যাতনের শিকার ভূক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘আমি আমার দাবিতে অনড় রয়েছি। আমার চাওয়া তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হোক।’

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমাদের আইন প্রশাসক ঢাকায় (হাইকোর্টে) আছেন, তিনি বিষয়টি ভালো জানেন। আমি অফিসিয়িলি এখনও জানতে পারিনি। তবে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দেবে সেটাই চূড়ান্ত। আমরা সেটা মেইনটেইন করবো।’

আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনিচুর রহামান বলেন, ‘আদালত পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন। আমরা আদেশের কপি হাতে পাইনি। বিষয়গুলো আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। পরে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের বাইরে আছি, এখনও কিছু জানি না। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভূক্তভোগী। এ নিয়ে হল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হাইকোর্টে এবং শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের আলোকে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগও তাদের তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে।

সারাবাংলা/এমও

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর