ঢাকা: দুর্নীতির মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নয় বছরের দণ্ড প্রদান করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়েছে। রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আত্মসমর্পণের করতে হবে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নয় বছরের দণ্ড প্রদান করে হাইকোর্টের দেওয়া ২৭৩ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি বুধবার (২৬ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের ৩০ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছিলেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সাইফুদ্দিন খালেদ। টুকুর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, আইনজীবী সাইফুল্লাহ মামুন ও মামুন চৌধুরী।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, বৈধ ব্যবসা এবং অন্যান্য পেশা অবলম্বন করে অর্থ ও সম্পত্তি অর্জনের অনেক উপায় রয়েছে। কিন্তু রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরা তাদের নামে এবং তাদের ওপর নির্ভরশীলদের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পত্তি রাখলে তা পেশার আওতায় আসে না।
আদালত আরও বলেছেন, রাজনীতিবিদরা জনগণ ও দেশের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার লক্ষ্যে রাজনীতিতে জড়িত হন। এটি জনগণ ও দেশের কল্যাণের জন্য এক ধরনের মহান ত্যাগ ও নিষ্ঠার কাজ। তাই রাজনীতিবিদরা ‘রক্ষক’ হয়ে ‘ভক্ষক’ হতে পারেন না।
আদালত বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য বাংলাদেশি ছাড়া কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। আর শেষ কথা হলো, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিতে লিপ্ত হলে পুরো সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপন করার অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক শাহরিয়ার চৌধুরী ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
দুদকের উপ-পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা ওইবছর ২৮ জুন মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত এ মামলার রায়ে টুকুকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৫ জুন তাকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি খালাসের রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এই রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন টুকু। পরে সেই আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের পুনঃশুনানি শুরু হয়।
শুনানি শেষে গত ৩০ মে হাইকোর্ট ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নয় বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। পাশাপাশি ১৫ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।