ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন শত শত ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই ভাঙছে আক্রান্তের সংখ্যার রেকর্ড। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। হাসপাতালে উপচে পড়ছে রোগী।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর এত চাপ যে, চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। দেশে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) থেকে বুধবার (২৬ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দুই হাজার ৬৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এটি বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্তের পরে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর রেকর্ড।
বুধবার (২৬ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট সকাল ৮ থেকে ৭ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৪২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এটি বর্তমানে দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তির পরিসংখ্যান।
প্রসঙ্গত, দেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ায় ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ৫ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ে। এ দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ২০৬৫ জন।
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে এরপর থেকে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। পরবর্তীতে ১০ আগস্ট দুই হাজার ৩৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপরে অবশ্য এই সংখ্যা কমতে থাকে।
তবে সব হিসেব নিকেশ পাল্টে দেয় চলতি বছরের জুলাই মাসের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
প্রথম বারের মতো চলতি মৌসুমে দুই হাজার রোগীর সংখ্যা ছাড়ায় ২২ জুলাই। এদিন দুই হাজার ২৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরপরে এই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায় ২৩ জুলাই (দুই হাজার ২৯২ জন) ও ২৪ জুলাই (দুই হাজার ২৯৩ জন)। ২৫ জুলাই দুই হাজার ৪১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় যা সেই তারিখে দেশের ডেঙ্গু সংক্রমণের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল।
তবে ২৬ জুলাই সেই সব সংখ্যা ছাড়িয়ে দুই হাজার ৬৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এখন পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্তের সংখ্যা।
এক নজরে:
১— ২৬ জুলাই, ২০২৩— ২,৬৫৩
২— ৬ আগস্ট, ২০১৯ — ২,৪২৮
৩— ২৫ জুলাই, ২০২৩ — ২,৪১৮
ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে:
বিগত দুই সপ্তাহে চতুর্থবারের মতো ঢাকার চাইতে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দেশের অন্যান্য স্থানের হাসপাতালে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩২৭ জন। তবে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এক হাজার ৩২৬ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে ৪০ হাজার ৩৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
‘মশা মারতে না পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে’
সারাদেশে এডিস মশা মারতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, শুধু ঢাকা নয়, ডেঙ্গু যতটা মেডিকেল প্রবলেম, তার থেকে বেশি ইউনিভার্নমেন্টাল প্রবলেম। যে জায়গায় পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বেশি জরুরি।
তিনি বলেন, প্রাইমারি হেলথ এবং পাবলিক হেলথ এক নয়। পাবলিক হেলথ হচ্ছে জনগণকে সম্পৃক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণ করা। এগুলো যদি আমরা বৃদ্ধি করতে না পারি, ডেঙ্গু রোগী যদি এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, আমাদের জন্য ডিফিকালট হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে মশা নিয়ন্ত্রণে একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম, যারা এই সমস্ত কাজ (মশা নিয়ন্ত্রণ) করছেন, তারা যদি এই কাজগুলো আরও বেশি বৃদ্ধি করেন, যেভাবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা কমানো যাবে এবং ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাও যথাযথভাবে দেওয়া যাবে।
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর আরও বলেন, সারাদেশেই বর্তমানে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এখন ঢাকা সিটির পাশাপাশি ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি। এডিস মশা যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন হবে।