Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এসএসসি: যে ২ কারণে পেছাল চট্টগ্রাম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুলাই ২০২৩ ১৪:২৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে গত তিন বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে। এর কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলেছেন, কোভিড মহামারিকাল কেটে যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা এবং গণিত বিষয়ে তুলনামূলক খারাপ ফলের কারণে সার্বিকভাবে পাসের হার কমে গেছে। তবে কোভিড মহামারি কালের আগের হিসেব করলে পাসের হার বরং বেড়েছে।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চলতি বছর অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

গত ৩০ এপ্রিল শুরু হয়েছিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার মিলিয়ে এবার পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৫৪ হাজার ৮১৯ জন। উপস্থিত ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৩ জন। বহিষ্কার করা হয় ১০ জনকে। তিনজনের ফলাফল স্থগিত আছে।

প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, চলতি বছরে পাস করেছে এক লাখ ২০ হাজার ৮৬ জন। পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

২০২২ সালে পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২০ সালে ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ছিল ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

পাসের হার কমে যাবার বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে। অর্থাৎ ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে এসে পাসের হার কমে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, আগের তিনবছর কোভিড মহামারির জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছিল। তিনবছর পর এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছিল। ২০১৯ ও ২০২৩ সালের ফলাফলে পাসের হার প্রায় একই।’

বিজ্ঞাপন

‘এছাড়া এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালের জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কোভিডের কারণে সেবার আমরা জেএসসি পরীক্ষা না নিয়ে সবাইকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। জেএসসি না দিয়ে সরাসরি এসএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেকে কিছু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল বলে আমরা মনে করি।’

এবার ২২ হাজার ৩৯৬ জন পরীক্ষার্থী এক বিষয়ে ফেল করেছে। ফলাফলে দেখা গেছে, ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী গণিতে ফেল করেছে। এরপর ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে ফেল করেছে প্রায় ৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী।

নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘সাধারণ গণিতে সার্বিকভাবে পরীক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে তেমন খারাপ করেনি, তবে আরও ভালো হলে পাসের হার বাড়তো। ওভারঅল অন্যান্য সাবজেক্টে আমাদের পরীক্ষার্থীরা ভালো করেছেন। গণিত ও ইংরেজির ক্ষেত্রে আমাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করে মানসম্মত পাঠদানের বিকল্প নেই।’

জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও গতবছেরের চেয়ে এবার কমেছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ১১ হাজার ৪৫০ জন, যার মধ্যে ছাত্রীরাই আছে এগিয়ে। ৬ হাজার ৪৪৬ জন ছাত্রী জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। বিপরীতে ছাত্র ৫ হাজার ৪ জন। বিজ্ঞানে ৯ হাজার ৮৭১ জন, মানবিকে ১৬২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১ হাজার ৪১৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

২০২২ সালে জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল ১৮ হাজার ৬৬৪ জন। ২০২১ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মোট ১২ হাজার ৭৯১ জন। এছাড়া ২০১৬ সালে ৮ হাজার ৫০২ জন, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৩৪৪ জন, ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৯৪ জন, ২০১৯ সালে ৭ হাজার ৩৯৩ জন এবং ২০২০ সালে ৯ হাজার ৮ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল।

কলেজিয়েট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ৪১০ জন, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৭৪ জন, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৩১ জন, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৬০ জন, নৌবাহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫৭ জন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪৩ জন, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২ জন, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২২৫ জন, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২২৩ জন, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৭৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এবার ছাত্র ও ছাত্রীদের পাসের হার প্রায় সমান। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার ছাত্রী ৮৫ হাজার ৪৯১ জন এবং ছাত্র ৬৭ হাজার ৮৯২ জন ছিল। ছাত্রী পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ছাত্র ৭৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২২ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী এবার এসএসসির গণ্ডি পার হতে পারেনি।

পাসের দিক থেকে এবারও এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা। বিজ্ঞানে ৯৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৮২ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং মানবিকে পাসের হার ৬৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন পাঁচ জেলা ও মহানগরে এবার পাসের হার গতবছরের চেয়ে কমেছে। চলতি বছর চট্টগ্রাম মহানগরীর বিদ্যালয়গুলোতে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মহানগর বাদে জেলায় পাশের হার ৭৮ দশমিক ১০ শতাংশ।

কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৭৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে ৬৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলায় ৭০ দশমিক ৩০ শতাংশ।

গতবছর চট্টগ্রাম মহানগরের স্কুলগুলোতে পাসের হার ছিল ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় গতবার পাসের হার ৮৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ ছিল। রাঙ্গামাটি জেলায় ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলায় ছিল ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার ২১৬টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১০৭ টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এবার এসএসসিতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৫টি। পাসের হার শূন্য এমন কোনো বিদ্যালয় নেই।

স্কুলভিত্তিক ফলাফল এবার মূল্যায়ন করেনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এজন্য পাসের ক্ষেত্রে শীর্ষ দশ স্কুলের নাম ঘোষণা হয়নি। তবে শতভাগ পাস করা ৪৫টি বিদ্যালয়ের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবার পাসের হারের বদলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর