‘বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ বাস্তবায়ন করেছে সরকার’
২৮ জুলাই ২০২৩ ১৪:৫৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের এই দেশে মানুষের ন্যায় বিচার, গণতান্ত্রিক অধিকার, আর্থ সামাজিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার; যেন নিশ্চিত থাকে। আমরা যখনই সরকারে এসেছি সব সময় চেষ্টা করেছি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কাজেই বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সেই সুযোগটা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর একে একে বাস্তবায়ন করে দিয়েছি।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারকসৌধের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারকসৌধ বঙ্গবন্ধুর প্রতিলিপিসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহিদ আইনজীবীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা
হয়েছে।
উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ফিরে আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম আমার ভাগ্যে বোধহয় একই রকম ঘটতে পারে। কিন্তু আমি পরোয়া করি নাই। আমি উপরে আল্লাহ এবং নিচে জনগণ ভরসা করেই আমি ফিরে এসেছিলাম। এই বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা সৃষ্টি করে গেছেন। সে বাংলাদেশকে আমাদের গড়ে তুলতেই হবে। জনগণের সহযোগিতায় বাংলাদেশকে একে একে বিচারহীনতা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই আর্থ সামাজিক উন্নতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছি।’
১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশের আদালত ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট’র উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এটা আমার জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে না, জাতির পিতার কন্যা হিসাবে অনেক বড় পাওয়া। আজকে আমি এখানে উপস্থিত থেকে আপনারা যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই কাজটি করতে পেরে আমি সত্যি আনন্দিত।’
তিনি বলেন, ‘কারণ স্মৃতি চিরঞ্জীব। আসলে স্মৃতি আমাদের সম্পদ। স্মৃতি নিয়েই আমাদের চলতে হয়। স্মৃতি বড় বেদনায় স্মৃতি বড় মধুর। দুঃখভরা স্মৃতিও যেমন আমাদের আছে মধুর স্মৃতিগুলোও থাকে। সেই স্মৃতিকে চিরঞ্জীব করার জন্য আজকে যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন, সেইজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জাতির পিতার এই স্মৃতিকে ধারণ করেছেন। যেটা হয়ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা এই সত্যকে জানতে পারবে। যে সত্য মুছে ফেলা হয়েছিল একদিন। এটাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন কোনো ঘটনা ঘটে। পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকে তো আসে আমার কাছে বিচার চাইতে বা বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য। আমার শুধু মনে হয়, আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছে এবং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কতবার এসেছি এই হাইকোর্ট। মনে হয়েছে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। আমরা কি কোনোদিন বিচার পাব না। ৩৫ বছর লেগেছে এই বিচার পেতে। ৩৫ বছর পরেই আমরা এই বিচার পেয়েছি। সেটাও যখন আমরা সরকারে আসতে পেরেছি তারপর।’
সরকার গঠন করার পর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করার বিষয়েও প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
১৫ আগস্ট ঘটনার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন সেনাপ্রধান কথা নেই বার্তা নেই অমনি ক্ষমতা দখল করেই আজকে থেকে রাষ্ট্রপতি হলাম, ব্যস রাষ্ট্রপতি হয়ে গেল। তারপর রাজনীতিতে নেমে গেল উর্দি পরে, উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ এবং দল গঠন করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে এই যে একটা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা; অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য নির্বাচনকে কলুষিত করা, নির্বাচনে যে কারচুপির কালচার সেটা কিন্তু ওই কারণেই হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখনই সরকারে এসেছি, আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি একটা রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ স্বাধীনভাবে তারা কাজ করবে। কাজেই বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সেই সুযোগটা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর একে একে বাস্তবায়ন করে দিয়েছি।
আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দ্রুত কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমের উদ্বোধনী বক্তৃতায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চয়ই সুখী হতাম, যেমন আমি পি জি হসপিটালে গিয়ে দেখি যে, এতজন ডাক্তারের নাম, যারা শহিদ হয়েছে। তাদের নাম লিখে ফলক করে রাখা হয়েছে। আমি সুখী হতাম বারের সদস্য ভাইয়েরা- যে যে সহকর্মীরা, যারা শহিদ হয়েছেন। এই সুপ্রিম কোর্টের গেটে এসে দেখতে পেতাম যে শহিদের নাম সেখানে লেখা রয়েছে, আমি সুখী হতাম।’ আপনারা আজকে সেই কাজটি করে দিয়েছেন। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এনআর/আইই