শান্তি সমাবেশে ছাত্র-তারুণ্য-যুব শক্তির ঢল
২৮ জুলাই ২০২৩ ১৫:৫৬
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টানটান উত্তেজনায় সরগরম হয়ে উঠছে রাজপথ। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ধরে বিএনপি জামায়াতের হত্যা সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে রাজপথে যুব-তারুণ্য শক্তির মহড়া দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এ লক্ষ্য আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। এরইমধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিসহ তার সমমনা জোটের সরকারবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রাজপথে সতর্ক অবস্থান থাকার অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এ ধারাবাহিকতার শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই তিন সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তির সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার পর নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে যোগদান করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশস্থলের আশপাশে রাস্তায় নেতাকর্মীরা অবস্থান শুরু করেছেন। দুপুর আড়াইটার দিকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয়। গানের তালে তালে আগত নেতাকর্মীরা হাততালির সঙ্গে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে দুপুরে এক দফা বৃষ্টির পর আবারও বৃষ্টি শুরু হলে নেতাকর্মীরা এদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে ডিএমপি কমিশনারের অনুমতির পর মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। রাতেই মঞ্চ তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে।
শুক্রবারের সমাবেশ নিয়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বলেছেন, সমাবেশের নামে বিএনপি কোনো সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি করলে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ, সর্বোপরি জনগণ তাদেরকে দাঁত ভাঙা জবাব দেবে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন তিন সংগঠনের নেতারা।
২৩ শর্তে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একই দিন বিএনপিকে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের অনুমতি দেয় ডিএমপি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের নেতারা বলেন, ‘বিএনপি আমাদের দেশের একটি ষড়যন্ত্রকারী দল। তারা শান্তিতে বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে রক্তপাত, খুন, গুম ধর্ষণ হত্যা। সমাবেশের নামে বিএনপির কোনো অহিংস পরিবেশ সৃষ্টি করলে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ, সর্বোপরি জনগণ তাদেরকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে। বিএনপির অন্যায় অত্যাচার জুলুম থেকে জনগণকে করার জন্য আমরা থাকব।’
লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
লোক সমাগম কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, সারাদেশ থেকে লাখ লাখ লোক আসতে শুরু করেছে। যুবলীগের সমাবেশে ৮ লাখ লোক হয়েছিল। এটা তিন সংগঠনের সমাবেশ। সেহেতু কত লোক কবে বলা যাচ্ছে না। তবে অগণিত লোক সমাগম হবে। লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে। আমরা সবকিছুর জন্য প্রস্তুত আছি।
বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দক্ষিণ গেটের পশ্চিম ও দক্ষিণমুখী করে তৈরি করা হয়েছে শান্তি সমাবেশের মঞ্চ। মঞ্চটির দৈর্ঘ্য ৬৪ ফুট এবং প্রস্থ ২৮ ফুট।
শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম,
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে আয়োজক নেতারা জানান, ঢাকা বিভাগ থেকে তিন থেকে পাঁচ লাখ ছাত্রছাত্রী তরুণ যুবকের সমাবেশ ঘটবে। সমাবেশে আগতদের পানি পিপাসার বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকবে। সমাবেশে আগত কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য মেডিকেল টিম থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে আওয়ামী লীগের এ তিন সংগঠনের যৌথ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার (২৮ জুলাই) বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানায়। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বৃহস্পতিবার এই তিন সংগঠনের সমাবেশ করার কথা ছিল।
পরে তারিখ ও স্থান পরিবর্তনের কথা বলা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় স্থান পরিবর্তন করে আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলার মাঠে সমাবেশ করার কথা বলা হয়েছিল। পরে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে সমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার দেওয়া হয়।
বিএনপির মহাসমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য প্রতিহত করতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ আহ্বান করেছে। সমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার সমন্বয়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সারাবাংলা/এনআর/একে