।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ হয়নি। এ ঘটনায় তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কিন্তু ঘোষণা দেওয়ার ১৭ দিন পার হয়ে গেলেও ঢামেক কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিবেদন প্রকাশে তাদের আরও সময় দরকার।
গত ২৩ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওই নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে। পরে দাফনের জন্য শিশুটিকে আজিমপুর কবরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানে গোসল ঘরে নড়ে উঠলে শিশুটিকে প্রথমে আজিমপুর মাতৃসদন এবং পরে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি শিশুটিকে।
এ ঘটনার পর গত ২৫ এপ্রিল ‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে: প্রয়োজন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন, এ ঘটনায় যে বা যারা দোষী তাদের শাস্তি দেওয়া হবে এবং তিনদিনের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেবে।
‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে: প্রয়োজন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ঢামেক হাসপাতালের মতো দেশের সবচেয়ে বড় এবং সরকারি হাসপাতাল কী করে জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা মতো ঘটনা ঘটল সে বিষয়টি উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকও।
তিনি বলেন, ‘গ্রামে হয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো জায়গায় কী করে এ ঘটনা ঘটল সেটি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এ তদন্ত কমিটিতে ঢামেক হাসপাতালের বাইরের চিকিৎসকদের রাখা হবে, যেন তারা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে পারে। কমিটি ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে।’
কিন্তু পরক্ষণেই পাশে থাকা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে কমিটি।’
তিনি বলেন, ‘এতে কেউ অবহেলা করলে… কেউ দায়ী থাকলে অবশ্যই শাস্তি পাবে’-বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ ঘটনার পর পরই ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ কান্তি পালকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. বিদ্যুৎ কান্তি পাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রথমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় আমাকে প্রধান করে। কিন্তু পরে আগের কমিটি সংশোধন করে ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জীকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়।’
বিদ্যুৎ কান্তি পাল সারাবাংলাকে জানান, ‘তারা গত ১০ মে তদন্ত প্রতিবেদন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরুদ্দিনের কাছে।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরুদ্দিন (১২ মে) সারাবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদন নিয়ে এখন আমরা নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ করছি, কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল সে বিষয়েও আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সামগ্রিক বিষয়টি পর্যবেক্ষণ না করে কী ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে, পরবর্তী সিদ্ধান্তে যাওয়ার জন্য কী কী নির্দেশনা আমরা দিতে পারি সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
‘কেবল তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রতিবেদন হিসেবে নয়, বিষয়টি যেন ‘মোর প্রফেশনাল’ হয় সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে আমাদের।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে জানিয়েছিলেন জানালে তিনি বিষয়টিকে ‘ইটস নট ইজি’ বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করছি, প্রতিবেদন নিয়ে আমাদেরকে অনেক কাজ করতে হয়েছে। তারপর স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন সর্ম্পকে আপনাকে জানাতে পারব।’
তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এর পরের ধাপ কী হবে জানতে চাইলে সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদফতর যদি প্রতিবেদন চায় তাহলে সেখানে জমা দেওয়া হবে নয়ত পরিচালক নিয়ম অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব এ বিষয়ে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় কেন এখানে কথা বলবে, এটা তো মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। ঘটনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। তদন্ত তারা করবে, ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।’
প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্বের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/জেএ/একে
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook