‘রাস্তা বন্ধ করতে আসবেন না, আপনাদের চলার রাস্তাও বন্ধ করে দেবো’
২৮ জুলাই ২০২৩ ১৯:১৫
ঢাকা: ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এখন নাকি ঢাকার প্রবেশমুখে আপনারা অবস্থান নেবেন? রাস্তা বন্ধ করবেন? আপনাদের চলার রাস্তাও বন্ধ করে দেব। রাস্তা বন্ধ করতে আসবেন না। চোখ রাঙাবেন না। দেশি-বিদেশি যারাই আজকে চোখ রাঙাচ্ছেন তাদের বলে দিতে চাই, আমাদের শিকড় মাটির অনেক গভীরে। আমাদের চোখ রাঙিয়ে উৎখাত করা যাবে না।’
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীন দলটির ৩ সংগঠনের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টানটান উত্তেজনায় সরগরম হয়ে উঠছে রাজপথ। এধারাবাহিকতায় সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ধরে বিএনপি জামায়াতের হত্যা সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে রাজপথে যুব-তারুণ্য শক্তির মহড়া দেয় ক্ষমতাসীন দলটির তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তির সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার পর নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে যোগদান করে। দুপুর আড়াইটার দিকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয়। দুপুরে এক দফা বৃষ্টির পর আবারও বৃষ্টি শুরু হলেও নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থান করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা দল সেই দলের নেতা তারেক রহমান ফখরুল, আমির খসরুরা আইন মানে না। এরা কথাবার্তার দম্ভ, এদের কথাবার্তার এটিচুইড শুনলে মনে হয়, এরা আইন মানে। এরা সুপ্রিম কোর্টে মানে না, হাইকোর্ট মানে না। এতো অহংকার, এতো দম্ভ ভালো নয়। টাকার বাহাদুরি থাকবে না। কারা কারা ঘন লন্ডনে যাচ্ছেন তারেক রহমানের হাতে ডলার তুলে দিচ্ছেন? আমরা জানি। কারা যাচ্ছেন, ভবিষ্যতে এমপি হবেন। নমিনেশন বাণিজ্য করবেন; সেই জন্য এখনি তাকে হাত করছেন, টাকা দিচ্ছেন। সে নিজে কোনোদিন দেশে আসতে পারবে?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা আমার মাতৃভূমিকে অপমান করেছে। যারা আমার মাতৃভূমির অর্থ লুট করেছে অর্থ পাচার করেছে? যারা আমার মাতৃভূমির গণতন্ত্রকে গিলে খেয়েছে; যারা আমার মাতৃভূমির মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলন্ঠিত করেছে; যারা জাতির পিতাকে অপমান করেছে; যারা জেলে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে; ১৫ আগস্টে রক্ত ঝরিয়েছে; যারা ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচন করেছে; যারা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছে। তাদের হাতে আমার এই জন্মভূমি মাতূভূমির ক্ষমতা কোনোদিন আমরা ছেড়ে দিতে পারি না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জানমাল রক্ষায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অতন্ত্র প্রহরীর মতো অবস্থান করবে।’
বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন নাকি ঢাকার প্রবেশমুখে আপনারা অবস্থান নেবেন? রাস্তা বন্ধ করবেন? আপনার চলার রাস্তাও বন্ধ করে দেব। আমাদের চোখ রাঙিয়ে উৎখাত করা যায় না, যাবে না। শেখ হাসিনা বাংলার জনগণের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি।’
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি নিজে কোনো দেশ ভ্রমণ করতে যাননি, বাংলাদেশের জনগণকে বাঁচাতে গিয়েছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে গিয়েছেন।’
বৈশ্বিক সংকটের কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ কিছু সমস্যার মধ্যেও বাংলাদেশ এখনও আশপাশের এবং অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভাল আছে বলে মনে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম।
আয়োজক সংগঠনের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ যৌথভাবে পরিচালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু।
এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপি-জামাতের পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হওয়া পূর্ণিমা রাণী শীল তার ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বিএনপি-জামায়াতকে ধিক্কার জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে নড়াইলে নিহত যুবলীগ নেতা আজাদ শেখও তার ছোটভাইয়ের হত্যার বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও