দ্বাদশের রফাদফা রাজপথে, হুঁশিয়ারি আওয়ামী লীগের
২৮ জুলাই ২০২৩ ২৩:১৫
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে রাজপথে দাবি আদায়ে সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার পতনের এক দফার কর্মসূচিতে অনড় থাকা বিএনপি। নির্বাচনকে সামনে রেখে উভয় রাজনৈতিক দলের অনড় অবস্থানের কারণে টানটান উত্তেজনায় সরগরম হয়ে উঠছে রাজপথ। একদিকে সরকারের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ধরে রাখার লক্ষ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে হত্যা সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তা প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।
অপরদিকে সরকারের পদত্যাগ দাবির মহাসমাবেশের থেকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিএনপি। শনিবার ২৮ জুলাই বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দলটি এ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। বিএনপির কর্মসূচির প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজধানীর প্রবেশপথে সকাল নয়টা থেকে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীন দলটির তিন সংগঠনের উদ্যোগে বিএনপি-জামায়াতের হত্যা-সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদ সমাবেশে হয়। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারাসহ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কড়া হুশিয়ারি উচচ্চারণ করে রাজপথে সরকারবিরোধী যেকোন ধরনের সন্ত্রাস নৈরাজ্য প্রতিহত করার ঘোষণা দেন এবং দ্বাদশের নির্বাচনি যুদ্ধ রাজপথে ফয়সালা করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ ধারাবাহিকতায় আজ সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ধরে বিএনপি জামায়াতের হত্যা সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে রাজপথে যুব-তারুণ্য শক্তির মহড়া দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুই সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে । দুই দফা বৃষ্টি বাধা উপেক্ষা করে রাজধানীসহ পাশ্ববর্তী জেলা থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থলে শিক্ষার্থী, যুব তারুণ্যের ঢল নামে। সমাবেশ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিসহ তার সমমনা জোটের সরকারবিরোধী যেকোন অপতৎপরতার রুখে দিতে রাজপথে সতর্ক অবস্থান থাকার অঙ্গীকার করেন নেতারা।
তারেক রহমান এখন লন্ডনে বসে লাদেন রহমানে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘উনি বড় বড় বক্তৃতা করেন। উনি যুব সমাজকে বাণী শোনান, উনি সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। তারেক রহমান আপনি এদেশ থেকে মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সুরম্য প্রাসাদে লন্ডনে বসবাস করেন। কোথা থেকে টাকা এলো? কোথা থেকে পেলেন এত টাকা?’
নানক বলেন, ‘এই দেশে যদি নৈরাজ্য অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় তাহলে এই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাত্রলীগ তা প্রতিহত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের শান্তিময় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।’ তাই আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও জয়লাভ করাতে দলের নেতাকর্মীদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সন্তানেরা বেঁচে থাকতে পেছন দরজায় ক্ষমতায় আসা যাবে না। তাদের দাবি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। একবার শুনি ১০ দফা, আবার শুনেছি ২৩ দফা। এবার শুনলাম এক দফা। সেই দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগ করতে হবে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ যে শেখ হাসিনাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। এই দেশের শাসনভার দিয়েছে। একজন পলাতক দণ্ডিত আসামী তারেকের ইশারায় তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য মামা বাড়ির আবদার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
‘বিএনপি কখনোই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ১৯৯১ সালে কারচুপি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। ২০০১ সালে ওরা ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। তাই ওরা নিশ্চয়ই জানে সেই নির্বাচন যতই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হোক, সেই নির্বাচনে বাংলার মানুষের ম্যান্ডেট ওরা নিতে পারবে না। তাই নৈরাজ্য সৃষ্টি করে পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকে যদি কেউ চোখ তুলে তাকান তার চোখ রাখা হবে না। আজকে তারুণ্য জেগেছে। আজকে যুবলীগ মাঠে, ছাত্রলীগ মাঠে। আজকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ মাঠে।’
তারেক রহমানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি সাহস থাকে বাংলাদেশে আসেন। বিদেশে বইসা হালুয়া রুটি খাইয়া বক্তৃতা দেন, এই দিন নাই। আপনারা ভাবছেন আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করবেন, আর উইড়া আইসা জুইড়া বসবেন, এইটা সম্ভব না। বাংলার মানুষ উন্নয়নের পক্ষে, শান্তির পক্ষে, জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘বিএনপির কাছে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকতে পারে না। এরা হলো খুনির দল। এরা বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতায় থাকতে খুন করেছে, ক্ষমতার বাইরে থাকতে খুন করেছে। তাদের হাতে নিরাপদ নয়। বাংলাদেশ নিরাপদ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে। আর আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিকজীবন যাবে রক্ত যাবে তবুও বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়ন করা হবে।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বাংলার মানুষ শান্তি চায়, বাংলার মানুষ যে গণতন্ত্র শেখ হাসিনা এই দেশের মানুষকে উপহার দিয়েছেন। সেই গণতন্ত্রের বিকাশ চায়। বাংলাদেশের মানুষ সমৃদ্ধি চায়। তারা অন্ন,বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের গ্যারান্টি চায়। যেটি জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন। একে একে তিনি তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করছেন।’
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কর্মীরা ভিজে পল্টনে আর নেতা আরাম করে বসে থাকেন লন্ডনে। এদের নেতা বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বড়জোর লুটপাটের যুবরাজ হতে পারেন। রাজপথের যুবরাজ হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আমরা সংসদীয় গণতন্ত্র চাই। বাংলাদেশের জনগণ রায় দেবে, শিক্ষার্থীরা রায় দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হুঙ্কার অনেকেই দিচ্ছেন। রাজপথে পরাজয়ের কথা তারা ভুলে গেছেন। তিনি লুটপাটের যুবরাজ হতে পারেন। মনে রাখতে হবে‒ রাজপথের রাজা ছাত্রলীগ। এমন নেতা কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, লুটপাটের যুবরাজ, এমন নেতা তিনি।’
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রসমাজ কালো হাত গুঁড়ো করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া হবে না। গণতন্ত্রবিরোধী যে অপশক্তি আগামী দিনে অনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে হাত মেলানোর চিন্তা করছেন তাদের সেই ষড়যন্ত্রের কালো হাত আমরা ভেঙে দেব।’
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম। আয়োজক সংগঠনের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ যৌথভাবে পরিচালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপি-জামাতের পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হওয়া সেই ১৪ বছরের পূর্ণিমা রাণী শীল তার ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তাদের অপকর্মের ধিক্কার জানিয়ে বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে