ইমো অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্ল্যাকমেইল, গ্রেফতার ৫
২৯ জুলাই ২০২৩ ১৬:২০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতারণার কৌশলটি অভিনব। যাদের ইমো অ্যাপে অ্যাকাউন্ট আছে, তাদের লক্ষ্যবস্তু বানাতো প্রতারক চক্র। নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্ট নম্বরে ইমো থেকে একটি নম্বর পাঠানো হয়, যাকে ওটিপি বলা হয়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা তখন ফোন করে বলত, ইমো অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গেছে, ওটিপি নম্বর বললে সেটি আবার সচল করে দেবে।
এমন ফাঁদে পড়ে অনেকে ওটিপি প্রতারক চক্রের সদস্যদের দিয়ে দিতেন। আর তাতেই ইমো অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিত তারা। এরপর অভ্যন্তরীণ আলাপের নানা তথ্য ফাঁসের ভয় দেখিয়ে কিংবা অন্য উপায়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিত। চট্টগ্রামের এক আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ঘটনায় পাবনা ও নাটোর জেলা থেকে পাঁচজনের একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সাইবার ইউনিট।
গ্রেফতার পাঁচজন হলেন— আরিফুল ইসলাম (৩১), শিমুল হোসেন (২২), সাহাবুল ইসলাম (৩৯), ইব্রাহিম হোসেন বাপ্পী (২১) এবং মো. হৃদয় হাসান (২৩)।
তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে তথ্য জানাতে শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে নগরীর দামপাড়ায় সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) লিয়াকত আলী খান এবং অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন।
ডিসি লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘কয়েকজন ভুক্তভোগী আমাদের কাছে এসে তাদের ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের সাইবার ইউনিটের টিম কয়েকজন প্রতারককে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এরা প্রযুক্তিগতভাবে পারদর্শী। বিভিন্ন কৌশলে ইমো অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে। প্রবাসীসহ বেশ কয়েকজন ইমো অ্যাপ ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পেয়েছি।’
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার সাহাবুল এ চক্রের অন্যতম হোতা। হৃদয় পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ এবং বাপ্পী রাজশাহী প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউটের ছাত্র।
লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘কোভিড মহামারির সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তখন হ্যাংকিং সংক্রান্ত প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করে বাপ্পী ও হৃদয়। ইমো অ্যাপ ব্যবহারের খুঁটিনাটি শিখে নেন। বাপ্পী অনেক বেশি দক্ষ হয়ে ওঠে। গত ২-৩ বছর ধরে তারা অনেক ইমো অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।’
এডিসি আসিফ মহিউদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে সাহাবুল। তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা আছে। র্যাব তাকে আগেও গ্রেফতার করেছিল। এছাড়া চক্রের মূল হোতা হিসেবে পল্লব সরকার নামে একজনের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। তার বিষয়ে তদন্ত চলছে। গ্রেফতার সবাই মোটামুটি শিক্ষিত। তাদের কাছে নিবন্ধনহীন অনেক সিম আছে, যেগুলো তারা হ্যাকিং বা প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে।’
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রতারকরা যেসব সিম থেকে ইমো অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে কিংবা ব্যবহারকারীকে ফোন করে ওটিপি নম্বর চায়, এসব সিমের কোনো নিবন্ধন থাকে না। ওরা প্রথমে ফোন দিয়ে বলে, আমরা কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছি অথবা অমুক অফিসার বলছি। আপনার মোবাইল নম্বরে কিংবা মেইলে একটি নম্বর গেছে, ওই নম্বরটি বলেন। যাদের প্রযুক্তি জ্ঞান কম, তারা নম্বর বা ওটিপি বলে দেন। কারণ, তারা তো জানে না এই নম্বরটি দিয়ে দিলে তাদের ইমো হ্যাক হয়ে যাবে।’
‘কোনোভাবে ওটিপি নম্বর পেলে হলো, সঙ্গে সঙ্গে ওই ইমো নম্বরের কন্টাক্ট লিস্টে যতজন আছে, তাদের তথ্য ও কথোপকথন প্রতারকরা পেয়ে যাচ্ছে। এবার চক্রের অন্য সদস্যরা সেসব তথ্য ব্যবহার করে ফোন করে হুমকিধমকি ও ভয় দেখাতে শুরু করে। ওই ইমো অ্যাকাউন্ট থেকে বিকাশ বা নগদে টাকাপয়সা চেয়ে বিভিন্নজনের কাছে মেসেজ পাঠায়। টাকা পেলে সেগুলো দিয়ে ফেনসিডিল-ইয়াবা সেবন করে।’
ইমো অ্যাপ ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়ার অনুরোধ করে এডিসি আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘অপরিচিত কাউকে ওটিপি, পাসওয়ার্ড কিংবা পার্সোনাল ইনফরমেশন কোনোভাবেই দেওয়া উচিৎ নয়। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করার বিষয়ে আমাদের সবার সতর্ক থাকা উচিত। ইমো অ্যাপ বেশি ব্যবহার করেন প্রবাসীরা, বিশেষ করে যারা মধ্যেপ্রাচ্যে থাকে। এরাই বেশিরভাগ এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে।’
সারাবাংলা/আইসি/এনএস