চট্টগ্রামে উপনির্বাচন রোববার, সিসি ক্যামেরায় মোড়ানো ভোটকেন্দ্র
২৯ জুলাই ২০২৩ ২০:৫৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রতিটি কেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সিসি ক্যামেরায় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ চট্টগ্রামে এ-ই প্রথম।
শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ‘নিরুত্তাপ’ নির্বাচন হলেও ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। আর প্রার্থীদের মধ্যে বিশেষত আওয়ামী লীগের জন্য ভোটারদের কেন্দ্রে আনাকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও পাঁচলাইশের একাংশ) আসনের উপনির্বাচন রোববার (৩০ জুলাই) অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ আসনের ১৫৬টি কেন্দ্রের ১ হাজার ২৫১টি বুথে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে। শনিবার দুপুরের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সামগ্রী হস্তান্তর করে সেগুলো কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ২৪ জন পর্যবেক্ষক বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবেন। আশা করছি, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারব।’
চট্টগ্রাম জেলা জ্যেষ্ঠ্য নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৫৬টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৪০৭টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে কমপক্ষে দুইটি আর বড় কেন্দ্র হলে তার চেয়ে বেশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি ভোটগ্রহণ মনিটরিং করা হবে। এর আগে আমরা ফটিকছড়ি পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম। সংসদ নির্বাচনের হিসেবে প্রথমবার চট্টগ্রামে সিসি ক্যামেরায় ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করা হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোটগ্রহণের জন্য ২ হাজার ১১০টি ইভিএম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ৪ হাজার ১০৬ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ১৬৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৩১৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২৬২৮ জন পোলিং অফিসার।
১৫৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৫টি সাধারণ এবং বাকি ৫৯ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬-১৭ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৭-১৮ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ এবং এপিবিএনের সমন্বয়ে ৮ ওয়ার্ডে ৮টি মোবাইল ফোর্স থাকবে।
এছাড়া ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দু’জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ৪ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৪টি টহল দল ও পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে মোট ওয়ার্ড আটটি- শুলকবহর, দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, লালখান বাজার, উত্তর আগ্রাবাদ, রামপুর এবং উত্তর হালিশহর। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৩। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯২৯ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮০ জন নারী ভোটার।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ছয়জন প্রার্থী। এরা হলেন, নৌকা প্রতীকে মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সামসুল আলম, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত, ছড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশিদ মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রকেট প্রতীকে মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও বেলুন প্রতীকে মো. আরমান আলী।
আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু’র সঙ্গে জাতীয় পার্টির সামসুল আলমের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নৌকার প্রার্থী জোর প্রচার-প্রচারণা চালালেও বাকি প্রার্থীদের মাঠে তেমন দেখা যায়নি। এর ফলে অনেকটাই ‘নিরুত্তাপ’ পরিবেশের এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কতটা হবে, তা নিয়ে জোর আলাপ-আলোচনা চলছে।
গত ২৩ জুলাই নির্বাচনী কার্যক্রম দেখতে এসে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছিলেন, ভোটার আনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়, এটা প্রার্থীদের দায়িত্ব।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি এমনিতেই কম থাকে। তাছাড়া এটা একাদশ সংসদের মেয়াদের একেবারে শেষ মুহুর্তের নির্বাচন। তবে আমরা ভোটারদের জন্য ভোট দেয়ার সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছি।’
নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার প্রচারণায় দেখেছেন, একটা গণজোয়ারের মতো সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। নেতাকর্মীদের মধ্যে যথেষ্ঠ উদ্দীপনা কাজ করছে। আমার মনে হয়, ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে।’
লাঙ্গলের প্রার্থী সামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপাতত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। আমিও ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য বলেছি। দেখা যাক, কী হয়।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন জানিয়েছেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে তিন দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আফছারুল আমীন। গত ২ জুন তিনি মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/একে