‘ঢাকা বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির’
২৯ জুলাই ২০২৩ ২২:৪১
ঢাকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। আমরা দেখেছি বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিলেন। রাস্তা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।
শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন প্রশ্ন রাখেন। এর আগে তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হয়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল তারা একটি বড় কর্মসূচি দিয়েছিল। তার আগেও সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের এনে জড়ো করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে এখানে সরকারের কোনো বাধা নেই। তবে যখন কেউ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, জানমালের ক্ষতি করবে, কাউকে মারার চেষ্টা করবে, হত্যা করবে ও গাড়ি ভাঙচুর করবে তখন নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩১ জন পুলিশ সদস্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও কয়েকটি হাসপাতালে আহত কয়েকজন পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নিয়েছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি মেহেদির ওপর বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়া হয়। কিন্তু তার বদলে যে একটা রিভেঞ্জ নেওয়া, সেটি কিন্তু তিনি বা পুলিশ করেনি। নীরবে তারা সহ্য করেছেন এবং তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করেছেন।’
কামাল বলেন, ‘বিএনপি ২০১৪-১৫ সালে ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল।’
বিএনপি আবারও সেই অগ্নিসন্ত্রাসে ফিরে যাচ্ছে কিনা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে অরাজকতা ও জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গতকাল দেখা গেছে বিএনপি হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রচার করেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় দেখেছি পুলিশ কখনও তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পিছনে ফেরে না। নিহত হবে নাকি আহত হবে এসব বিষয়ে পুলিশ ভাবে না। জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা তা দেখেছি। আজও পুলিশ বীরত্বের সঙ্গে সন্ত্রাস মোকাবিলা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অগ্নিসন্ত্রাস থেকে মানুষসহ জীবজন্তুরাও রক্ষা পায়নি। এর কারণে মানুষ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বিগত ২০১৪-১৫ সালে দেখেছি অগ্নিসন্ত্রাসে অগ্নিদ্বগ্ধদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন একটি হাসপাতাল করতে। এত পরিমাণ মানুষ অগ্নিদ্বগ্ধ হয়েছিলেন যার কারণে একটি হাসপাতাল করতে হয়েছিল। আজকের ঘটনা আমাদের সেই স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে বিএনপির এক নেত্রী নিপুন রায়ের ফেসবুকের একটি অডিও শুনেছি। তিনি বলছেন- তোমরা আগুন ধরাও, এগুলো আমাদেরকে দেখাতে হবে। জায়গা মতো দেখাতে হবে, জায়গাটা কোনটা সেটি তিনি নিজেই জানেন। তিনি দাউ দাউ করে আগুন জ্বালানোর হুকুম তিনি দিচ্ছেন। সব জায়গা থেকে বিএনপির নেতারা এ ধরনের কাজের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। আমরা এটির তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটা পালন করবেন। এটা যেমন সত্য সে রকম ভাবে আমি আহ্বান করবো, তারা যেন ২০১৪-১৫ এর মত জ্বলাও পোড়াওয়ের যে নৃসংশতা ঘটিয়েছিল তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। এগুলো ঘটালে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীসহ এই দেশের মানুষ কেউ সহ্য করবে না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তাঁর (নিপুণ রায়) শ্বশুরকে (গয়েশ্বর রায়) ডিবিতে এনে আপ্যায়ন করা হয়েছে। আরেকজন নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী গিয়ে জুস খাইয়েছেন। তাহলে যারা পুলিশের ওপর ‘হামলার নেতৃত্ব দিলেন’, তাদের কী আপনারা তোষামোদ করছেন? এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের এটি ভুল ধারণা। আমানউল্লাহ আমানকে যখন আটক করা হয়, তখন তিনি রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। তাকে হৃদরোগ হাসপাতালে পুলিশ ভর্তি করেছে, চিকিৎসা দিয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন শুনেছেন একজন বিএনপি নেতা পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন, আরেকজন সামান্য ধাক্কাধাক্কিতে আহত হয়েছেন; প্রধানমন্ত্রী শুনেই তাদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন- সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। এটিই মানবতার কাজ।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে অনেক মানবিক কাজ করে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাব অর্জন করেছেন। আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়েছিলেন সমবেদনা জানাতে। ওইদিন খালেদা জিয়া দরজা খোলেননি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা শনিবার ছয়টি বাস ও বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন। সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় অবস্থান করে বিএনপির ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম নিবারণ করেছেন। তারা পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের দেশের মানুষ এমনই যে, কোথাও ভাঙচুর হলে কেউ আহত হলে সেখানে সবাই সেবা দিতে যান। ছাত্রলীগ-যুবলীগও এই দায়িত্ব পালন করেছে।’
সারাবাংলা/একে