Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সহনশীলতা দেখাচ্ছি, প্রতিশোধ নিলে হদিস পাওয়া যেত না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ আগস্ট ২০২৩ ১৪:২০

ঢাকা: বিএনপির উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা সহনশীলতা দেখাচ্ছি। কিন্তু আবার দেখলাম সেই অগ্নিসন্ত্রাস। ২০০১ এর নির্বাচনের পর তারা যেভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার করেছে আমরা যদি তার একভাগ প্রতিশোধ নিতাম তো তাদের হদিসই পাওয়া যেত না। আমরা তো প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনি।’

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে বাংলাদেশ কৃষক লীগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শোকাবহ আগস্টের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে কৃষক লীগ এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতার এই দেশে হতদরিদ্র, ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না সেই অঙ্গীকারও পুর্নব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এটাই জাতির পিতা স্বপ্ন। এটা আমাদের পূরণ করতে হবে। কারণ তিনি রক্ত দিয়ে গেছেন এদেশের মানুষের জন্য। তার রক্ত ঋণ শোধ করতে হবে। এদেশের মাষের মুখে হাসি ফুটিয়ে যে দুঃখী মানুষের মুখে তিনি হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাব এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে এই একটা প্রতিজ্ঞা নিয়েই এসেছি। এই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে আমার বাবার স্বপ্ন আমি পূরণ করবো। সেটাই আমি করতে চাই। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠনকেও সেভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আমরা দেখি আমাদের বিরোধী দল থেকে, যদিও পার্লামেন্টে তারা নাই। পার্লামেন্টে না থাকলে তাদের বিরোধী দল বলাও হয় না, তারপরও বলে আমরা নাকি পালানোর পথ পাবো না, হুমকি দেয়। যিনি এই বক্তৃতা দেন আমি তাকে একটু স্মরণ করাতে চাই যে, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কোনদিন পালায় নাই, পালাই নাই। তাদের প্রভু জিয়াউর রহমানও চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে, পেরেছে? পারে নাই।’

বিজ্ঞাপন

তারপর এরশাদ আর খালেদা জিয়া, এরা তো রীতিমতো একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো গণহত্যা চালিয়েছে। ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। চোখ তুলে নিয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। দখল করেছে। বসতবাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে আবার কলাগাছের চারা পুঁতেছে। এইরকম অপকর্ম বিএনপি বাংলাদেশে করেছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘আর তাদের দোসর হলো জামায়াত, তারা এতো করেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। পাচার করেছে বিদেশে, সম্পদের পাহাড় করেছে। জিয়া মরার সময় ৪০দিন টেলিভিশনে দেখাল জিয়ার কিচ্ছু নাই একেবারে গবীর ফকির ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি। আর ক্ষমতার আসার পর দেখলাম তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। মনে হল সেই ভাঙ্গা স্যুটকেসটা জাদুর বাক্স আর ওখান থেকে শুধু বের হচ্ছে টাকা।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছেলেরা যে মানিলন্ডারিং করে বিদেশে টাকা পাঠিয়েছিল। ৪০ কোটি টাকা আমরা উদ্ধার করে ফেরত এনেছি এবং আরও তো রয়ে গেছে।’

বিদেশে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছিল আর কোনদিন রাজনীতি করবে না, ওই খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া। আর সেই সময় আমি বিদেশে ছিলাম, আমাকে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসতে দেবে না। সমস্ত আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সকে বলে দিয়েছে কেউ যেন আমাকে নিয়ে ঢাকায় ল্যান্ড না করে। ঢাকায় যদি তারা অবতরণ করে তাদের অবতরণ করতে দেবে না। এই ধরনের নির্দেশ দেওয়ার পরও একরকম জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের থ্রেট করেছিল। কেউ যদি এয়ারপোর্টে যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা তো মানেনি। যেদিন আমি জোর করে নামলাম ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ সেদিন এয়ারপোর্টে। সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ফিরে এসেছি। আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল। আমি যে মুহূর্তে নামব, সেই মুহূর্তে গুলি করে মারবে। আমি বলেছি খুব ভাল কথা, দেশের মাটিতে তোর মরলাম !বিদেশে বিভুঁইয়ে তো মরতে হল না? আমাকে বলেছে, আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে, কেউ আপনার খোঁজ পাবে না। আমি বলেছি বাংলাদেশে এমন জায়গা এখনো সৃষ্টি হয় নাই যে, আমাকে নিয়ে গেরে বাংলাদেশের মানুষ খুঁজে বের করবে না?’

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই দলের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার মা (খালেদা জিয়া) এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। আর তার ছেলে তারেক জিয়া। খুন, অস্ত্র, চোরাকারবারি মানি লন্ডারিং দুর্নীতির মামলার আসামি। যেখানে আমেরিকা পর্যন্ত তাকে ভিসা দেয়নি। ভিসা বাতিল করে দিয়েছে এবং যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে গেছে। আসামি যে দলের নেতা তাদের মুখে বড় বড় কথা, আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। আরে তোরা তো পালাইয়া আছিস। এক পলাতক আসামির তত্ত্বাবধানে এতো লম্বা কথাটা আসে কোথা থেকে?’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা সহনশীলতা দেখাচ্ছি। ২০০১ এর নির্বাচনের পর যেভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করেছে আমরা যদি তার একভাগ প্রতিশোধ নিতাম তো তোদের হদিসই পাওয়া যেত না। কারও হদিসই পাওয়া যেত না। আমরা তো প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনি। ঠিক আছে, যার যার পার্টি করো? আমরা তো মানা করিনি। আমারা তো আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতেই পারতাম না। পুলিশ দিয়ে বাধা দেওয়া হতো।’

কিন্তু ২১ আগস্ট যেদিন গ্রেনেড হামলা করে আমার ওপর সেদিন কিন্তু পুলিশ ছিল না অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘চক্রান্ত করেছিল হত্যা করতে, আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার বক্তৃতা ছিল, সেটা স্মরণ করিয়ে দেই। খালেদা জিয়া বলেছিল, একশো বছরেও আওয়ামী লীগ কোনদিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আর আমার কথা বলেছিল কি? প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও কোনদিন হতে পারবে না। এটা তো খালেদা জিয়ার মুখের কথা ছিল। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর! এখন কি হলো?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে জড়িত। এটা তো প্রমাণিত। যে কারণে খুনি মোশতাক অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াকে প্রথম সেনাপ্রধান বানালো। জিয়ার সঙ্গে যদি সখ্যতা না থাকত, চক্রান্তে না থাকত? কেন তাকে সেনাপ্রধান বানাল? মোশতাকের পতন হলো আর জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। তার পতনের পর তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরেক সেনাপ্রধান এরশাদ। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য। রক্ত দিয়েছে আমাদের নেতাকর্মীরা। ওরা কতজন এদেশের জন্য স্যাক্রিফাইস করেছে? এই দেশের জন্য, এদেশের মানুষের জন্য যত আত্মত্যাগ করেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের কর্মীরা। আওয়ামী লীগসহ আমাদের সহযোগী কর্মীরা।’

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

সারাবাংলা/এনআর/এমও

প্রধানমন্ত্রী সহনশীলতা

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫ দোকান
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর