ঢাকা: সুনামগঞ্জের টাঙুয়ার হাওড় থেকে গ্রেফতার বুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, মিথ্যা, সাজানো ও দুরভিসন্ধিমূলকভাবে আটক ও মামলা দায়ের করার মধ্য দিয়ে তাদের সন্তানদের জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। মামলা দায়ের প্রসঙ্গে অভিভাবকরা প্রশ্ন তুলে বলেন, নাশকতার পরিকল্পনা করতে টাঙুয়ার হাওর কেন যেতে হবে।
অভিভাবকরা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, তাদের সন্তান-স্বজনেরা কোনোভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নন। আর আটককৃত শিক্ষার্থীরা আইনজীবীদের জানিয়েছেন, মামলা দেওয়ার জন্য পুলিশই নানান কিছু সংগ্রহ করে তাদের কাছে পাওয়া গেছে বলে ‘জব্দ’ হিসেবে দেখিয়েছে।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকেল চারটায় বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন আটককৃত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আটককৃত শিক্ষার্থী খালিদ আম্মারের ভাই জুনায়েদ। সংবাদ সম্মেলন থেকে আটককৃতদের দ্রুত জামিন প্রদান এবং মামলা থেকে অব্যহতি দিতে বিচারবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে আটককৃত শিক্ষার্থীদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না বলেও দাবি অভিভাবকদের।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ওই দিন রাত ১০টার দিকে শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিভাবকদের ফোন করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাহিরপুর থানায় নিয়ে এসেছে। এবং তাদের ও অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর চেয়েছে। পরিচয়পত্র দিলে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেবে বলে জানায়। অভিভাবকদের দাবি, এর বেশি কোনো কথা শিক্ষার্থীদের ‘বলতে দেওয়া হয়নি’। সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নামে মামলা হওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, সোমবার বিকেলে কয়েকজন অভিভাবক বুয়েট উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে ক্যাম্পাসে আসেন। সেখানে গিয়ে জান যায়, উপাচার্যও নাকি মামলা হওয়ার পর জানতে পেরেছেন। ঘটনার একদিন পরে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টা তাদের সঙ্গে কী হয়েছে, তা এখনও জানতে পারেনি অভিভাবকরা।
জুনায়েদ বলেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যার পর সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ। কোনো বুদ্ধিমান ছেলে এ কাজ করবে না। পুরো ২৪ ঘণ্টা ধরে আমরা অন্ধকারে ছিলাম। এসব টোটালি মিথ্যা অভিযোগ। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তাদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে যাবে। নাশকতা করতে টাঙুয়ার হাওড় কেন যেতে হবে? এটা কেমন হয়ে গেল না!’
অভিভাবকদের দাবি, এই মামলা হাস্যকর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দুরভিসন্ধিমূলক। সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের পক্ষে জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কারণ কখনো সম্মুখীন হইনি। আমরা কেউ পরিচিত ছিলাম না। ভিসির সাথে কথা বলতে এসে কানেক্টেড হয়েছি।’
উল্লেখ্য, সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কায়’ গত রোববার বিকেলে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ওই দিন বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে এবং দু’জন কিশোর হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশের দাবি, গ্রেফতার সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী। এদের মধ্যে ২৪ জন্য বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী।