১৫ আগস্টের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে ‘কমিশন আইন’ প্রস্তুত: মন্ত্রী
১ আগস্ট ২০২৩ ২০:০০
ঢাকা: আইনমন্ত্রী আ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। তবে কয়েকজন খুনির বিচারের রায় কার্যকর করা হয়নি। তারা বিদেশে লুকিয়ে আছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। এখন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পেছনে জড়িত বা ষড়যন্ত্রকারীদের( কুশলীবদের) চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। এ জন্য একটি আইন প্রণয়ন করার কাজও শেষ পর্যায়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই আইনটি সংসদে উত্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রখ্যাত সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের লেখা ‘পনেরো আগস্টের নেপথ্য কুশীলব’ বাইয়ের মোড়ক উম্মোচনে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এ সব কথা বলেন। বইটি প্রকাশ করেছে শিলালিপি।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল, ইতিহাসে এর চেয়ে মর্মন্তুদ ঘটনা আর নেই। এর মধ্য দিয়ে জাতির স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রমূলে আঘাত হানা হয়েছিল। আমরা এরপর কক্ষচ্যুত হয়েছি। জাতি পথ হারিয়েছিল। যার ডাকে এমন বীরত্বব্যঞ্জক যুদ্ধ করেছিল বাঙালি, এমন আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, স্বাধিকার, স্বর্নিভরতার জন্য, তারা তার জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডকে মেনে নেয়নি। তার বিচারের পথ উন্মোচনের মধ্য দিয়ে আমাদের আশাবাদ পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ঘাতকদের বিচার হলেও ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হয়নি। এমন গভীর-অনুসন্ধান করে বইটি লিখেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।
শোকের মাসে এক মিনিট নীরবতার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে বক্তব্য রাখেন শিলালিপির প্রকাশক জাহিদুল ইসলাম। এরপরই দুইটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, বইয়ের লেখক মনজুরুল আহসান বুলবুল, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম এমপি, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুখ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এই গ্রন্থের মধ্যদিয়ে ১৫ আগস্টের নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে। আর এই হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের অনেক এমপির কারণে জেলা হত্যার পথ সুগম করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের জন্য এপলিড ডিভিশনে কোনো বেঞ্চ ছিল না। বিচারের হাই কোর্ট ৭ জন বিচারক মামলাটির বিচার করতে গিয়ে রায় দেওয়ার সময় বিব্রত বোধ করেছেন। তাদের এই বিব্রত থেকে সাধারণ মানুষ বলবে তারা কি তাহলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার চায় না। ওইসব বিচারকরাই কুশীলব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। কানাডা সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা যদি বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত না দেয় তা হলে তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা মুখার্জি নামে পরিচিত তিনি। সে যুদ্ধ চলাকালীন থেকে তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদসহ আমাদের অনেককে জানিয়েছেন যে তোমাদের কিছু রাজনীতিবীদ ও সেনা সদস্য পাকিস্তানিদের সঙ্গে আঁতাত করছে। মুখার্জি আতাতকারীদের নামও প্রকাশ করেন। তারা হলেন খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মেজর জিয়া, একজন পেট্রোবাংলায় চাকরি করতেন তার নাম। বিষয়টি তৎকালীন সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীকেও অবহিত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের তথ্য ভারতের সিবিআইয়ের কাছে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার সর্ম্পকে আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য ছিল তারা বঙ্গবন্ধুকে জানিয়েছিল কিনা তা জানার দরকার।’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন পনেরো আগস্টের নেপথ্যে কুশীলব বইয়ের প্রশংসা করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হয়নি। ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর মওলানা ভাষানীর প্রতিক্রিয়া কী ছিল, জিয়াউর রহমানের ভূমিকাসহ নেপথ্যে অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের ভূমিকা জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে