Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মশা মারতে সিঙ্গাপুর থেকে এলো ৫ টন ব্যাকটেরিয়া

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ আগস্ট ২০২৩ ২০:৩৮

ঢাকা: মশা মারতে সিঙ্গাপুর থেকে আনা হলো ব্যাসিলাল থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) নামে ব্যাকটেরিয়া। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এ ব্যাকটেরিয়া এসে পৌঁছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সেলিম রেজা। আগামীকাল বুধবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এর প্রয়োগ শুরু হবে। কার্যকর প্রমাণিত হলে আরও আনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কোথায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, ‘যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর রোগী পাওয়া যাচ্ছে ও প্রকোপ বেশি (হট স্পট) সেসব এলাকায় আগে প্রয়োগ শুরু হবে। ডেঙ্গু নিধনে আমাদের যে বিশেষ কমিটি আছে তারা এলাকাগুলো নির্ধারণ করবেন। বিটিআই যদি কাজ করতে শুরু করে তাহলে আরও আনা হবে।’

এর আগে ২১ জুলাই সারাবাংলাকে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ কে এম শফিকুর রহমান বলেন, ‘মশা মারতে সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাকটেরিয়া কেনার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। জুলাই মাসের শেষ দিকে ব্যাসিলাল থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) নামে ওই ব্যাকটেরিয়া আনা হবে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন তিনি। শফিকুর রহমান আরও জানিয়েছিলেন, ‘ডেঙ্গুর সময়ে এটি ব্যবহার করা হবে। অন্তত দুই-তিনমাস চলবে। এর কার্যকারিতা প্রমাণ হলে সারাবছরই ব্যবহার করা যাবে।’

আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুর থেকে আসছে মশা মারার ব্যাকটেরিয়া

কিছুদিন আগে বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারাবাংলাকে বিটিআই ওষুধ সর্বসাধারণের নাগালের মধ্যে আনার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

বিটিআই আনার খবরে সন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি কার্যকর উদ্যোগ। তবে আরও আগে আনলে ভালো হতো।’

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ১৯৬১ সালে বিটিআই ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।

কিউলেক্স মশার ওপর এটি কীভাবে কাজ করে তা জানতে ঢাকায় ১৯৯৯ সালে বিটিআই নিয়ে গবেষণা চালানো হয়।

ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা পরিচালিত গবেষণায় বাংলাদেশ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ও সেইফওয়ে বলে একটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। পরে এই গবেষণার ফল জার্নাল অব মেডিকেল অ্যান্থোলজিতে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় এটি নিরাপদ ও কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়।

লার্ভিসাইডিংয়ে বিটিআই নিরাপদ পদ্ধতি হলেও এটির উৎপাদক কারা, বাংলাদেশে আমদানি করার বৈধ প্রতিষ্ঠান কারা— এ সব ভাবতে হবে বলে জানান কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তা না হলে বিটিআইয়ের নামে মানহীন কিছু আনা হলে প্রকৃতিতে এটির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তার।

সিডিসি’র পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী— অনুমোদিত মাত্রায় বিটিআই ব্যবহার করা হলে তা মানুষ, মৌমাছি, প্রাণী এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় মশার সংখ্যা কমানোর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিটিআই ব্যবহার করা হলে তা সবচেয়ে কার্যকর।’

বিটিআই ব্যাকটেরিয়া মূলত মাটিতে পাওয়া যায়। এই ব্যাকটেরিয়া ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে মশায় রূপান্তরিত হওয়ার আগেই লার্ভাকে মেরে ফেলার জন্য বিটিআই ব্যবহার করা যায়।

বিটিআই ডিম থেকে বের হওয়া লার্ভাকে মেরে ফেলে। এতে পরিণত মশার সংখ্যা কমে যায়। ফলে মশার মাধ্যমে জিকা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা পশ্চিম নীলে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।

মশা-মাছির প্রাদুর্ভাবের আকারের ওপর নির্ভর করে, হ্যান্ডহেল্ড স্প্রেয়ার, ট্রাক বা বিমান ব্যবহার করে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বিটিআই পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (EPA)- নিবন্ধিত কীটনাশক। আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং জৈব কৃষি কার্যক্রমে এটি ব্যবহার করা হয়। এমনকি নির্দেশনা অনুসারে ব্যবহার করা হলে, এটি জমে থাকা পানিতেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বিটিআই যেভাবে কাজ করে

ট্যাবলেট, ব্রিকেট, পেলেট, দানা বা তরলসহ নানা রূপে বাজারে পাওয়া যায় এটি। মশার লার্ভা, ব্ল্যাকফ্লাইস এবং ছত্রাক; বিটিআই ব্যাকটেরিয়া খেলে এগুলো তাদের শরীরে একধরনের টক্সিন বা বিষক্রিয়া তৈরি করে। ফলে তাদের মৃত্যু হয়।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

টপ নিউজ ব্যাকটেরিয়া মশা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর