ডেঙ্গু ঝুঁকিতে অন্তঃসত্ত্বারা, সতর্ক থাকার পরামর্শ
২ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৪১
ঢাকা: রাজবাড়ী সরকারি কলেজের গণিতের শিক্ষার্থী ২৬ বছর বয়সি রুমা বিশ্বাস ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বসবাস করা রুমা বিশ্বাসের ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২৩ জুলাই। আরোগ্য ক্লিনিক নামে একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন রুমা।
২৬ জুলাই স্নাতকোত্তর মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিচ্ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুমা বিশ্বাস। তবে পরীক্ষার নির্ধারিত সময় তিন ঘণ্টা শেষ হতে না হতে রুমা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর একটি স্থানীয় ক্লিনিক ও রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ঘুরে তাঁকে নেওয়া হয় ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ২৬ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। মারা যায় তার গর্ভের শিশুটিও।
৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা নাজিয়া সুলতানা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (ডব্লিউটিও উইং) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজিয়া সুলতানা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে। ২৫ জুলাই সকালে তিনি মারা যান।
আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা কান্তা বিশ্বাস বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টে সহকারি পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত পপুলার হাসপাতালে। ২৩ জুলাই রাতে মারা যান কান্তা বিশ্বাস।
শুধুমাত্র রুমা বিশ্বাস, নাজিয়া সুলতানা ও কান্তা বিশ্বাসই নয়, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত পাঁচ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। এর মাঝে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণে শকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দুই জন অন্তঃসত্ত্বা নারী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত। কারণ একজন নারী যখন অন্তঃসত্ত্বা হন, তখন তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ সময় তিনি সব ধরনের রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। আর তাই এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে।
সারাদেশে যখন ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ তখন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বাড়তি সচেতনতা ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরাও।
ডেঙ্গুতে ঝুঁকি বাড়ে অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশু উভয়েরই
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ডেঙ্গু জ্বর হলে তা মা ও অনাগত শিশুর জন্য বিশেষ ঝুঁকি বয়ে আনে। গর্ভকালে যেকোনো পর্যায়ে ডেঙ্গু হলে তা মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এরা ক্যাটাগরি ‘বি’তে পড়ে। এর অর্থ হলো তাদের জন্য বিশেষ ও আলাদা ব্যবস্থা লাগবে।
ডেঙ্গু ভাইরাস মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যেতে পারে। বিশেষ করে গর্ভের শেষ দিকে এবং সন্তান প্রসবের সময় মা আক্রান্ত থাকলে এই সমস্যা বেশি হয়। ফলে শিশুও আক্রান্ত হয়। আর গর্ভের প্রথম দিকে হলে ডেঙ্গু হলে অগ্রিম গর্ভপাত হতে পারে। আবার শেষের দিকে হলে অ্যান্টিপারটাল এবং পোস্টপারটাল রক্তপাত বেশি হতে পারে।
মায়ের একলাম্পসিয়া ও প্রিএকলাম্পসিয়াও হতে পারে। এ ছাড়া ডেঙ্গুর প্রভাবে মায়ের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লিভার ও কিডনি অকার্যকর বা শ্বাসের মারাত্মক রোগ রেসপিরেটরি অকার্যকর হয়ে যাওয়া, এআরডিএস হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। সব মিলিয়ে ডেঙ্গুর কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মৃত্যুহার অন্যদের তুলনায় বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেজাউল করিম কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় যদি কারো ডেঙ্গু হয় তবে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়। আবার গর্ভাবস্থার শেষের দিকে প্রসূতি নারীর রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়। বিশেষ করে শেষ তিন মাসে এমনটা ঘটে বেশি। ওই সময়ে যদি কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তবে তার দুই ধরনের বিপদ দেখা দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত ডেঙ্গু থেকে শরীরে পানি কমে যায়। এর ফলে প্রেশার বা রক্তচাপ মাত্রা কমে আসে অনেক ক্ষেত্রে। এর ফলে মায়ের পাশাপাশি পেটের সন্তানের শরীরের রক্ত চলাচল ও পুষ্টি কমে যেতে পারে। এর ফলে গর্ভেই শিশুর মৃত্যু হতে পারে। অথবা অসময়ে সন্তান প্রসব হতে পারে। অথবা সন্তানের ওজন কম হতে পারে। এর কারণে শেষ তিনমাসের দিকে বা প্রসবকালীন সময়ে মায়ের ডেঙ্গু হওয়াটা বেশি ভয়ের।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি গর্ভকালীন সময়ের প্রথম বা দ্বিতীয় তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় নারী তবে সেটিও কিন্তু বিপজ্জনক। কারণ এ সময় জ্বরের কারণে মায়ের গর্ভপাত হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বিপদ বেশি মায়েরই। অন্যদিকে রক্ত বন্ধ হওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কারো কারও দাঁত দিয়ে, চোখ দিয়ে, নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। গর্ভবতী মায়ের এক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে মা ও সন্তান দুইজনেরই মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।’
ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি কপাল খারাপ সেই প্রসূতি নারীর যার হয়তোবা ডেঙ্গু হয়েছে আজ কিন্তু একইসঙ্গে শুরু হয়েছে প্রসব বেদনাও। প্রাকৃতিক নিয়মেই এমনটা সম্ভব। দেখা গেলো একজন গর্ভবতীর সন্তান প্রসবের দিনেই ডেঙ্গু শনাক্ত হলো যার সেদিনই অস্ত্রোপচার করতে হবে। যাদের আগে একটা বা দুইটা অস্ত্রোপচারের ইতিহাস আছে তাদের যদি অস্ত্রোপচার করতেই হয় সেক্ষেত্রে আরেকটা বিপদ ঘটে। এমন রোগীর যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার দিনই পানি ভাঙে অর্থাৎ অস্ত্রোপচার করতেই হবে এমন পরিস্থিতি সামনে আসে তখন আরেকটা বিপদ। কারণ একদিকে তার গায়ে জ্বর আবার ডেঙ্গুর কারণে রক্তে অনুচক্রিকাও কমে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘এমন রোগীর অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। সাধারণত বেসরকারি ক্লিনিকে এই অস্ত্রোপচারগুলো করতে চান না অনেকেই। মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি থাকার কারণে তারা সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন রোগীকে। এসব অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে, অনেক বেশি রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। আবার রক্ত দিয়েও যে এমন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব তেমন নাও হতে পারে। এই গর্ভবতী নারীদের অবস্থা সবচাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন।’
গর্ভবতী নারীদের জন্য পরামর্শ
গাইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের উচিত জ্বর এলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রক্তের সিবিসি করানো। এই জ্বরে নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। প্লেটলেট কম এলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া জ্বরের শুরুতে একবার ও চার দিন পর দুই দফায় ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। ওয়ার্নিং কিছু সাইন আছে ডেঙ্গু জ্বরের সেগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেমন প্রসাব কমে যাওয়া, দুর্বল লাগা, পেট ব্যাথা, অতিরিক্ত বমি –শরীরের চামড়ায় বা মুখে র্যাশ বা মেস্তা জাতীয় লাল ছোপ হতে পারে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। জ্বর কমে যাওয়ার সময়টা সবচেয়ে ভয়ের। এই সময়টা চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে ।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় ভয় ব্লিডিং। তাই এ সময় ডেলিভারিতে –নরমাল বা সিজার –দুই ক্ষেত্রেই বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। বিশেষ করে রোগী যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তবে তার জন্য একাধিক ব্লাড ডোনার রেডি রাখতে হবে। ডেলিভারির পরপরই নবজাতককে মনিটর করতে হবে (শিশু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে) । তাছাড়া ডেলিভারির পর প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। তাই খুব বাধ্য না হলে অন্তঃসত্ত্বা ডেঙ্গু রোগীকে কোনভাবেই অপারেশন বা ব্যাথার ওষুধ দিয়ে ডেলিভারি করানো যাবে না।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘এবার সবচেয়ে বেশি রোগী হলো লেট রেফারেল। হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া, শরীরে পানি জমে যাওয়া, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা—এমন উপসর্গ থাকার পরও অনেক রোগী বুঝতে না পারায় দেরিতে হাসপাতালে আসছে। পরিস্থিতি যখন গুরুতর হচ্ছে, তখন তারা আসছে। এতে অনেকে মারা যাচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেজাউল করিম কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু আগে থেকে কেউ বলতে পারে না কখন তার পানি ভাঙবে বা তার ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তাই গর্ভবতী মায়েদের আলাদা যত্ন প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। প্রয়োজনে গর্ভবতী নারীকে জ্বর আসার পরে বাসায় না রাখাটাও বিকল্প ভাবনা হতে পারে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে গর্ভবতী নারীর হাসপাতালে ভর্তি থাকা নিরাপদ। কারণ বাসায় রাত তিনটার দিকে বা কোনো বন্ধের দিনে যদি তার কোনো সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে তিনি কোথায় যাবেন? যদি সেইসময় কোনো হাসপাতালে আলাদা বেড না পায় তখন কী হবে? নতুনভাবে কোনো চিকিৎসককে তো সেই সময় দেখানো সম্ভব না।’
তিনি বলেন, ‘গর্ভবতী নারী জ্বর আসার পরে সেটার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলে ভালো। সেখানে দেখা গেলো তার জ্বরের চিকিৎসা যখন হচ্ছে তখন অন্য কোনো সমস্যা সামনে এলেও চিকিৎসক সেই হিসেবে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কারণ মা তো ঘরে বসে বুঝতে পারবে না বাচ্চার ওজন গর্ভে বাড়ছে নাকি কমছে। এমন অবস্থায় চিকিৎসকরা কিন্তু নানাভাবে বুঝতে পারেন এ বিষয়গুলো। এ সময় মাকে প্রচুর বেশি পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেয় যেনো সন্তানের কোনোভাবেই পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। একইসময় যেনো মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার মাঝে রক্ত চলাচল বন্ধ না হয় কোনো ভাবেই। সবশেষে যদি জ্বর সেরে যায় তবে চিকিৎসকের পরামর্শে তারা বাড়ি ফিরে যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গর্ভবতী মায়ের ঝুঁকি অনেক বেশি যা আসলে অনেকে সহজে বুঝতেও চায় না। অনেক রোগী আছে যারা হয়তো দীর্ঘ সময় পরে গর্ভধারণ করেছে বা কারও টেস্ট টিউব বেবি আছে কিন্তু প্রথম তিনমাসে ডেঙ্গু জ্বরের কারণে তার গর্ভপাত হয়ে গেল। অথবা শেষের দিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে গর্বের শিশু মৃত্যুবরণসহ আরও নানা সমস্যা হতে পারে। সব মিলিয়ে ডেঙ্গু জ্বর গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই বিপজ্জনক। এমন অবস্থায় তার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।’
ডা. কাজল বলেন, ‘আমাদের কাছে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে আসা অন্তঃসত্ত্বাদের আমরা তাদের চারপাশটা পরিষ্কার -পরিছন্ন রাখতে বলছি। পা আর হাতের অনাবৃত অংশ ঢেকে রাখতে বলছি। কারণ পায়েই মশা কামড় দেয় বেশি। মশার কয়েলের ধোঁয়া থেকে দুরে থাকার পরামর্শও দিচ্ছি। ঘর বা অফিসে অ্যারোসোল বা যেকোনো ধরণের কীটনাশক স্প্রে করার বিশ মিনিট পর তাদের সেই স্থানে যেতে বলছি।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গুতে যেহেতু আমাদের রক্তনালির ছিদ্র বড় হয়ে যায় এবং এর থেকে জলীয় অংশ বের হয়ে যায়, তখন অন্তঃসত্ত্বা নরীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ নারীরা অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁদের রক্ত কমে যায়। আর যদি অ্যানিমিয়া হয়, তখন শরীরে স্বাভাবিক অক্সিজেনের ঘাটতি থাকে। এ সময় যদি রক্তনালি দিয়ে জলীয় অংশ বের হয়ে যায়, তখন রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। রক্তের অক্সিজেন তৈরি করার সক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে মৃত্যু বেশি। মূলত এ কারণে তাঁর ঝুঁকিটা বেশি থাকে।’
তিনি বলেন, ‘গর্ভের সন্তান অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে। এ কারণে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে চাপ পড়ে; লিভার, কিডনি, স্টোমাক নানা কিছু। এ সময় যদি পেটে বা বুকে পানি জমে, তাহলে অন্তঃসত্ত্বা নারী নিঃশ্বাস নিতে পারেন না। এটিও মৃত্যুর অন্যতম কারণ।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘অন্তঃসত্ত্বা নারী ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত। কারণ একজন নারী যখন অন্তঃসত্ত্বা হন, তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ সময় তিনি সব ধরনের রোগের ঝুঁকিতে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘এ জন্য এই সময়ে বাড়িতে যদি অন্তঃসত্ত্বা কেউ থাকে, তাহলে অবশ্যই বাড়ির আঙিনা এডিস মশামুক্ত রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি টানাতে হবে। এ ছাড়া ফুলহাতা পোশাক ও পায়ে মোজা পরবে। জ্বর হোক বা না হোক, কোনো ধরনের অসুস্থতা দেখা দিলেই তার ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। কারণ লক্ষণ ছাড়া ডেঙ্গু হলে অন্তঃসত্ত্বা নারী ঝুঁকিতে পড়বেন।’
সারাবাংলা/এসবি/একে