মশা মারতে দক্ষিণের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি খরচ করবে উত্তর সিটি
২ আগস্ট ২০২৩ ১০:২২
ঢাকা: ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মধ্যেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এতে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় মশা মারতে দুই সিটি করপোরেশন মিলে খরচ করবে ১৬২ কোটি টাকা। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রস্তাবিত বাজেটে মশা নিধনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি টাকা আর উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এ খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১২২ কোটি টাকা যা দক্ষিণের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণের বেশি।
সোমবার (৩১ জুলাই) ডিএসসিসি নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে মশা নিধনে ৪৬ কোটি ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবহনে এই টাকা ব্যয় করা হবে।
এর আগে, সোমবার (২৪ জুলাই) গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় নতুন অর্থবছরে মশা মারার কাজে ১২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা, যন্ত্রপাতি কেনা, ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচারকাজে খরচ হবে এই টাকা।
এবারের বাজেটে মশার ওষুধ কেনার পেছনে দক্ষিণের বরাদ্দ ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং উত্তরের ৪৫ কোটি টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহন খাতে দক্ষিণের বাজেট ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা আর উত্তরের বাজেট ৫ কোটি টাকা। মশা নিধনের যন্ত্রপাতি কিনতে উত্তরের বরাদ্দ ৩০ কোটি টাকা, যেখানে দক্ষিণের বরাদ্দ মাত্র ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এর বাইরে উত্তরে আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা বাবদ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা; মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের বিশেষ কর্মসূচি ১ কোটি টাকা, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশা নিধন কার্যক্রমে ৩০ কোটি টাকা এবং মশা নিধনে চিরুনি অভিযান পরিচালনায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচারে ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনে মশা নিধনের বাজেট ১২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
উত্তরের খরচ দক্ষিণের দ্বিগুণেরও বেশি
মশা নিয়ন্ত্রণ খাতে আড়াইগুণ বেশি বরাদ্দের পাশাপাশি সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দ্বিগুণের বেশি খরচ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। দুটি সংস্থার বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও যন্ত্রপাতি কিনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উত্তরে ব্যয় করা হয়েছে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মশা নিধনের মূল কার্যক্রমে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। তাছাড়া যন্ত্রপাতি কিনতে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি টাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মশা নিয়ন্ত্রণ বাবদ মোট ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী এ খাতে ব্যয় হয় ৩১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশকে ২৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন ও পরিবহনখাতে ব্যয় হয় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া মশা যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুই কোটি বরাদ্দ রাখলেও ব্যয় হয় মাত্র তিন লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রায় মশা বিশেষ করে এডিস মশার বিস্তার অন্যতম এক প্রতিবন্ধকতা। তাই, দায়িত্বভার গ্রহণের পর মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনায় আমরা আমূল পরিবর্তন এনেছি। শুরু করা হয়েছে বছরব্যাপী সমন্বিত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। নতুন এই কার্যক্রমের আওতায় পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ, মানসম্পন্ন কীটনাশক ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জন্য এবং মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘কেউ যদি বলতে পারে এই পদ্ধতিতে মশা নির্মূল করা যাবে, আমি সেই পদ্ধতি গ্রহণে সবার আগে প্রস্তুত আছি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মশার জন্য স্বীকৃত পদ্ধতি হলো উৎস চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করা। আমরা মশার উৎস চিহ্নিত করার কাজ করছি। উৎস চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারলেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মশার পেছনে এত টাকা খরচ করার পরও কেন সুফল আসছে না, তা নিয়ে আমরাও ভাবছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। মশানিধনে নিয়মিত লার্ভিসাইডিং ও এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান, বিএনসিসি ও বাংলাদেশ স্কাউটের সদস্যদের যুক্ত করে প্রচারাভিযান পরিচালনা, ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকার মসজিদ ও মাদ্রাসার এক হাজার ইমাম ও খতিবদের সঙ্গে এবং স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, ছাদবাগানে এডিসের লার্ভা শনাক্তে ড্রোনের ব্যবহার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণকে সচেতন করতে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলে ১০ জন ডেডিকেটেড পিআর নিযুক্ত করা হয়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণে মশার প্রজাতি ও মশার আচরণ নির্ণয় করে সঠিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে গবেষণা করার জন্য চুক্তি করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/আরএফ/একে