Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বাবার মতো আমিও জীবন দিতে প্রস্তুত’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ আগস্ট ২০২৩ ১৯:০১

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বাবার মতো যদি জীবন দিতে হয়, আমি প্রস্তুত। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফের আপনারা দেশ সেবার সুযোগ দেবেন- এটাই আপনাদের কাছে চাই।

বুধবার (২ আগস্ট) বিকেল চারটার পর জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, দুপুর সোয়া ১টার দিকে হেলিকাপ্টার যোগে রংপুরে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে জনসভাস্থলে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। মঞ্চে আসন গ্রহণের আগেই জনসভাস্থলে উপস্থিত বৃহত্তর রংপুরবাসীর জন্য ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এরপর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রংপুর বিভাগের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি উত্তর জনপদের কল্যাণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। পাশাপাশি সরকার প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। সেই ধারাবাহিকতায় রংপুরেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন তিনি। রংপুর সুগার মিল বন্ধ আছে, সেটাও বেসরকারি খাতে দিয়ে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে। আর বাকি যারা ক্ষমতায় ছিল এই রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করে নাই। খালি নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে কাজ হয়। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে আজ দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। আজ হতদরিদ্র মাত্র ৫শতাংশ। আল্লাহর রহমতে সেটুকুও থাকবে না।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছিন্ন কাপড় পরতে হয় না। বিদেশ থেকে পুরাতন কাপড় এনে পরাতে হয় না। প্রত্যেক মানুষের আজ কাপড় কেনার সেই আর্থিক স্বচ্ছলতা এসে গেছে। আগে একবেলা ভাত পেত না, খাবার পেত না; আজ দুই/তিন বেলাও খাবার সুযোগ হয়ে গেছে মানুষের। সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি।’ এ দেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের ভাগ্য পবির্তনে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘এই এলাকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। তাছাড়া দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি, করে যাব। আপনারা কষ্ট করে এসেছেন। হয়তো এই মাঠে ছোট, ধরছে না। আমি আসার সময় দেখলাম রাস্তায় অনেক মানুষ। অনেক দূরে যারা অবস্থানর করছেন, চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু আমি এইটুকু বলতে পারি, আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। আমি হৃদয় দিয়ে আপনাদের ভালোবাসা উপলব্ধি করি।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার তো হারাবার কিছু নেই। একটা মানুষ আপনজন হারালে শোক সইতে পারে না। আর আমি একই দিনে সব হারিয়েও শুধু একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি- এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে অন্ন জোগাব; প্রতিটি মানুষের ঘর করে দেব; প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত করব। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কারণ, এই সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। উন্নয়নশীল দেশ হবে উন্নত দেশ। ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম আগামীর ভবিষ্যৎ। তারাই এই দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আরও উন্নত করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়, কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফের আপনারা সেবা করার সুযোগ দিন।’ ‘আবার নৌকায় ভোট দেবেন তো?’- উপস্থিত জনতার কাছে এমন প্রতিশ্রুতি চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তারা তুলে ফের নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা খুব কষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। আমি এইটুকু বলতে পারি, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণই তো আমার সংসার, আপনজন। আপনাদের মাঝে খুঁজে পাই আমার বাবা-মায়ের স্নেহ, ভাই-বোনের স্নেহ। কাজেই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বাবার মতো যদি জীবন দিতে হয়, আমি প্রস্তুত। সেই কথাটাও আপনাদের জানিয়ে দিয়ে দিতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী জনতার প্রতি তার ভালোবাসা জানিয়ে বলেন, ‘বিদায়ের আগে বলে যাই- রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নাই; আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।’

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মহানগরের যুগ্ম-আহবায়ক আবুল কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাজেদ আলী বাবুল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন (বকুল)।

তার আগে বক্তৃতা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ও ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

এদিন দুপুর ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে আসা নেতারা। এর আগে, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টার যোগে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর সোয়া ১টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই সফরে পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

জীবন প্রধানমন্ত্রী প্রস্তুত বাবার মতো শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর