Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসই করতে পারে খালেদা-তারেক জিয়ারা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ আগস্ট ২০২৩ ২০:৫১

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করে খেয়েছে। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ওই জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসই করতে পারে খালেদা জিয়া, তার কুপুত্র তারেক জিয়া আর তাদের দলের লোকেরা। এরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না।’

বুধবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, দুপুরে হেলিকাপ্টারযোগে রংপুরে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভা মঞ্চে আসন গ্রহণের আগে বৃহত্তর রংপুরবাসীর জন্য ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকারে যখন এসেছে এই রংপুরে কখনও মঙ্গা হয় নাই, রংপুরে কখনও খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে এলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। যখন ১৯৯৬ সালে সরকারে এসেছিলাম তখনও মঙ্গা ছিল না। কিন্তু ২০০১ সালে যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে, দুই হাতে টাকাপয়সা লুট করে। সে ও তার ছেলেরা মিলে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আবার দেশে মঙ্গা শুরু হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি। তারপর থেকে আমি যে পদক্ষেপ নিয়েছি এদেশের কোন মানুষের কোনো কষ্ট হয় নাই।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের বিস্তারিত তথ্য এবং একটা বিভাগের উপযোগী সমস্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি খালি হাতে আসিনি। আমি আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। এই কিছুক্ষণ আগে আমি কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করলাম। আপনাদের উন্নয়ন যাতে ত্বরান্বিত হয়, সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।’

আপনাদের গ্যাসের দাবি অনেক দিনের, সরকার সেই কাজও বাস্তবায়ন করে দিয়েছে বলেও অবহিত করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটি কাজের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের উন্নতি ও ভাগ্যের পরিবর্তন করা। একটা কথা বলতে পারি, এই অঞ্চলে আর কখনও দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গা দেখা দেবে না। আমরা সেভাবেই উন্নয়ন করছি।’

লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একদিন আমাদের দেশের মানুষ চাঁদেও যাবে। প্লেন বানাবে, সেই শিক্ষা সেখানে হবে।’ চিলমারি বন্দর ফের চালু করাসহ সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসাবে ব্যবস্থা করে দেওয়ারও প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের সিদ্ধান্ত বলে মুজিবর্ষের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। এখানে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। জাতির পিতাকে হত্যা করে সেই খেলা শুরু হয়েছিল। বারবার ক্ষমতা দখল, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। আমরা অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ শান্তিমতো এখন ভোট দিতে পারে।’

৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুর বিভাগে নদী খননের কাজ, নদী ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। এখন যেগুলো হয়ে গেছে সেখানে আর সেচের জন্য কোন কষ্ট হয় না। সেই সাথে তিস্তা মহাপরিকল্পনা সেটাও আমরা বাস্তবায়ন করবো বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

রংপুরবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানকার জমি সোনার জমি। ভালো ফসল হয়। সবার কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের মাটি আছে, উর্বর মাটি, সোনার ফসল ফলে। আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন চাষ করবেন। আপনারা গাছ লাগাবেন। অন্তত চারটি করে গাছ লাগাবেন। যার যতটুকু জমি আছে যে যা পারবেন, আবাদ করবেন। আমি চাই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সবকিছু সমানভাবে উন্নতি হয়। সেটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রংপুরের এই বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে। রাস্তায় চলন্ত বাসে আগুন দিয়েছে। কত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এরা কি মানুষের জাত? এরা মানুষের জাত না। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করে খেয়েছে। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। দেশের টাকা লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে পাচার করে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। কোত্থেকে আসে এত বিলাসিতা! সেটাই আমার প্রশ্ন। দেশের মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খেয়েছে।’

তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের কারাদণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তাদের দুর্নীতির মামলা, এই মামলা তো আমাদের করা না। তাদেরই প্রিয় প্রেসিডেন্ট ছিল ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দিন, তাদেরই করা। সেই মামলায় তারা শাস্তি পেয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে। আমরা সৃষ্টি করি।’

জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর বক্তব্য রাখেন, কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন (বকুল)।

তারও আগে বক্তব্য রাখেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকে।

এর আগে, ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিজের শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই সফরে পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দু‘টি জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/এমও

আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়া টপ নিউজ তারেক জিয়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর