Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভিত্তিহীন মামলায় তারেককে সাজা দেওয়া হয়েছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ আগস্ট ২০২৩ ১৯:২৩

ঢাকা: দুদক সরকারের নির্দেশে সাজানো চার্জশিট দাখিল করে এবং সেই ভিত্তিহীন মামলাতেই তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১নং হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।

‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দেওয়া ফরমায়েশি সাজা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

সংবাদ সম্মেলনে থেকে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আগামী রোববার (৬ জুলাই)) সুপ্রিম কোর্ট বার, ঢাকা বারসহ দেশের সকল আইনজীবী সমিতিতে কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা করা হয়। এবং আগামী ৮ জুলাই সকল আইনজীবী সমিতিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

লিখিত বক্তব্যে কায়সার কামাল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে গত ২ আগস্ট আদালত এক মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি সাজা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে তাদের নামে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারকে জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করার হীন উদ্দেশ্যে এই মামলা দায়ের করে। যার ফলশ্রুতিতে এই ফরমায়েশি রায় আদালতের মাধ্যমে ঘোষণা করা হলো।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: তারেকের ৯, জোবাইদার ৩ বছরের কারাদণ্ড

বিএনপির আইন সম্পাদক বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তার কন্যা জাইমা রহমানের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ১০ কাঠা প্লট রয়েছে। যা তিনি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, তারেক রহমান বা জাইমা রহমান বা ডা. জোবায়দা রহমানের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কোন প্লট নেই এবং কখনো ছিল না। একইভাবে গাজীপুর সদর থানাধীন ৬৬ শতাংশ ও ১২.৫ শতাংশ জমি তারেক রহমানের নামে ক্রয়কৃত দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারেক রহমানের নামে বা তার মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে এরূপ কোনো সম্পত্তি গাজীপুর জেলায় নেই এবং কখনো ছিল না। তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং জনগনের কাছে তার ইমেজ ক্ষুণ্ন করার জন্য সম্পূর্ণ মনগড়া, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ এনে আদালতকে ব্যবহার করে সাজা দেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে দুদককে অবহিত করা হয়েছিল যে, ওই জমির মালিকানার সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই এবং কোনো দলিল পত্রেও তার কোনো সই নেই এবং ওই সম্পত্তিগুলো তারেক রহমানের নয়। অথচ দুদক সরকারের নির্দেশে সাজানো চার্জশিট দাখিল করে এবং সেই ভিত্তিহীন মামলাতেই তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, মামলার চার্জশিটে বলা হয় তারেক রহমান দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ১ কোটি ৭৪ লাখ ১৭ হাজার ৩৫০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। অথচ তারেক রহমান দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটির মালিক নন। তিনি শুধুমাত্র প্রকাশক ছিলেন। পত্রিকাটি বিএনপির দলীয় সম্পদ যেখানে তারেক রহমানের ব্যক্তিগত কোনো বিনিয়োগ নেই। ফলে এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন। তা ছাড়া তিনি রহমান গ্রুপ নামে বিভিন্ন কোম্পানিতে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ২ হাজার ৫০টি শেয়ার ক্রয় করেছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলায় শহিদ মইনুল রোডের বাড়ি সংস্কারের জন্য ৩৪ লাখ টাকা খরচের অভিযোগ আছে। যা তারেক রহমান তার আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেছেন। সব মিলিয়ে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার কথিত জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে অভিযোগটি সাজানো এবং ভিত্তিহীন। তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে এই সাজা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মামলায় জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রসঙ্গে কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুটি এফডিআর, যার মোট মূল্য ৩৫ লাখ টাকা অর্থাৎ প্রাইম ব্যাংক, বনানী শাখায় দুটি এফডিআর, যার একটি ২৫ লাখ টাকার এবং অন্যটি ১০ লাখ টাকার, যা তারেক রহমানের অর্থে কেনা মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই অর্থ ডা. জোবায়দা রহমান তার মাতা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর কাছ থেকে ২০০৫ সালের জুলাইয়ে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ডা. জোবায়দা রহমানের পিতা ছিলেন নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান প্রয়াত রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান। ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের অনেক আগে থেকেই অর্থাৎ ২০০৫-০৬ এবং ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে ওই উপহার প্রাপ্ত ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর প্রদর্শন করেছিলেন এবং যথারীতি ওই এফডিআর আয়কর দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের যে জমিগুলো তার মালিকানাধীন মর্মে দাবি করা হয়েছে তার মালিক তিনি কখনোই ছিলেন না। তা ছাড়া তার যাবতীয় সম্পদের হিসেব দাখিল করে যথাযথভাবে ট্যাক্স ফাইলে ট্যাক্স পরিশোধিত আছে এবং একইভাবে ডা. জোবায়দা রহমানের ৩৫ লাখ টাকার দুটি এফডিআর যা তার ব্যক্তিগত ফাইলে অভিযোগের বহু পূর্ব থেকে প্রদর্শিত আছে।

মামলায় স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ সম্পর্কে কায়সার কামাল বলেন, এই মামলায় মাত্র ১৬ দিনে ৪২ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। নজিরবিহীন দ্রুততায় সরকারের নির্দেশে আদালত অতি উৎসাহী হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত এমনকি কখনো মোমবাতি জ্বালিয়ে এই মামলার সাজানো সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। গতকাল (বুধবার) সরকারের নির্দেশে রায় প্রদান করেছেন। অথচ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ২ শত ৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি মামলাসহ লক্ষাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলায় বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। আবার আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, বাহাউদ্দিন নাসিম, মহিউদ্দিন খান আলমীগরের মামলা খালাস হলেও অনুরূপ অভিযোগে বিএনপি নেতাদের নামে দায়ের করা মামলার সাজা দেওয়া হয় বা বহাল রাখা হয়। কথিত নাইকো দুর্নীতি মামলার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারকাজ চললেও একই অভিযোগে শেখ হাসিনার মামলা খালাস হয়ে যায়। আর দুদকও ওই রায়ের বিরুদ্ধে কোনো ফোরামেই আপিল করে নাই। দুদক ব্যস্ত বিএনপির জনপ্রিয় নেতা/নেত্রীদের মামলায় ফরমায়েশি সাজা দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে।

বিএনপির আইন সম্পাদক বলেন, জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ দলীয়ভাবে ব্যবহার করে তাদের স্বীয় স্বার্থে দিনকে রাত এবং রাতকে দিন করছে। আমরা সব সময় বলে এসেছি সরকার বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং বিচারকদের দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করছেন। সে কারণেই আমরা এই ধরনের ফরমায়েশি রায় প্রত্যাখ্যান করছি।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, মীর নাছির উদ্দিন আহমেদ, নিতাই রায় চৌধুরী, দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার খান ও সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস

টপ নিউজ তারেক রহমান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিনিয়র সাংবাদিক বদিউল আলম আর নেই
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩১

সম্পর্কিত খবর