‘আমরা চোর না ডাকাত যে পালাতে হবে’
৩ আগস্ট ২০২৩ ২৩:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো : সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতাদের দেওয়া বক্তব্য উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কী এমন হয়ে গেছে, দেশ কোথায় গেছে যে আওয়ামী লীগকে পালাতে হবে ? কে পালাবে, পালানোর মতো কোনো পরিবেশ কী দেশে হয়েছে ? আমরা চোর না ডাকাত যে পালাতে হবে ?’
বুধবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সংকটের গতি, প্রকৃতি ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে ভূমিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নগরীর বিজিএমইএ ভবনে এ সেমিনারের আয়োজন করে ‘চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)’। সভাপতিত্ব করেন সিসিআরএসবিডি’র সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ‘বিএনপির কিছু কিছু দায়িত্বশীল লোক এমন কিছু দায়িত্বহীন কথা বলেন, দুঃখ লাগে। কথায় কথায় বলে, আমাদের নাকি পালাতে হবে। আরেক পালিয়েছে তো তাদের নেতা, মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে। আরেকজন মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে আছেন। আমরা পালাব কেন? আমরা কোথায় পালাব? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরাই তো স্বাধীন করেছি। এটা আমাদের দেশ। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির এ দেশ।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করবেন ঠিক আছে, বক্তব্য দেবেন, কিন্তু লুজ টক করা উচিৎ নয়। আপনাদের তো লজ্জাশরম থাকা উচিৎ। চুরি-ডাকাতি, লুটপাট করে আবার ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছেন। লন্ডনে বসে প্রশাসনের লোকজনকে হুমকিধমকি দিয়ে ক্ষমতায় চলে আসবেন? সারাদেশ থেকে পল্টনে লোক নিয়ে ঢাকা শহর অবরুদ্ধ করে আওয়ামী লীগকে ফেলে দেবেন? আওয়ামী লীগ কি এমন দল যে ধাক্কা দিলে পড়ে যাবে? তার চেয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে।’
আপনারা কীভাবে বলছেন, গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে। আপনারা কি করেছিলেন, পনেরোই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে, সেটি এখনও কেউ ভোলেনি। শুধু ভোটের দিন ভোট দিলেই গণতন্ত্র হয় না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। বিদেশিরা আপনাদের ক্ষমতায় নিয়ে যাবে ? বোকার স্বর্গে বাস করছেন।’
ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘টু মাচ ফ্রিডম আমাদের মানসিকতা বদলে দিয়েছে, দুঃখের সঙ্গে বলছি। কোনো দেশের নাম উল্লেখ করছি না, যেসব দেশ আমাদের ফ্রিডমের কথা বলছে, তাদের দেশেও কিন্তু অনেককিছু সেন্সর হয়।’
তরুণ সমাজকে ফেসবুক-ইউটিউব থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশি সময় ফেসবুকে নষ্ট করবেন না। ফেসবুক-ইউটিউব শুধু বাংলাদেশের জন্য খোলা হয়নি। ইউরোপ-আমেরিকায় কয়জন ফেসবুকে সারাক্ষণ থাকে। তারা টুকটাক লেখালেখি করে। যে কোনো বিষয়ে ফেসবুকে লিখে ফেলা, যে কোনো বিষয়কে পলিটিসাইজ করা- এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্র্যাকটিক্যাল চিন্তা করে নিজের জীবনকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার চিন্তা করলে বেশি মঙ্গল হবে।’
‘আমরা তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। আমরা স্টার্টআপ প্রোগ্রামের সুযোগ দিচ্ছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ তৈরি করছি। গত ১৪ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু দেশের অগ্রগতির পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। এটি থাকতে হবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিচুক্তি করেছিলেন। এরপর কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক কাজ হয়েছে। এখন সেখানে অন্তত অস্থিতিশীলতাটা নেই। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রামকে ঘিরে ট্যুরিজম হাবের কথা ভাবতে পারি। আশপাশের যেসব ল্যান্ডলক কান্ট্রি আছে, সেগুলোর জন্য এই রিজিয়নে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দেশকে উন্নত করতে পারি। রাজনৈতিক ফালতু বাকোয়াজি বাদ দিয়ে আমাদের এভাবে চিন্তা করতে হবে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’
সিসিআরএসবিডি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন ড. আবদুল্লাহ ফারুক। প্যানেল আলোচক ছিলেন বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত শোভারানী ত্রিপুরা, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, খাগড়াছড়ি মং সার্কেলের চিফের পরিবারের সদস্য রাজকুমার টুইন ইনপ্রু মারমা, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মুনাল মাহবুব এবং সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম।
সারাবাংলা/আরডি/একে