Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভরা মৌসুমে দাম চড়া ইলিশের, হতাশ ক্রেতারা

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ আগস্ট ২০২৩ ১০:৫৫

ঢাকা: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, এই তিন মাস ইলিশের মৌসুম। মাছটির সঙ্গে বাঙালির কেবল পেটের নয়, প্রাণের টান। নাম শুনলেই বাঙালির রসনায় জল আসে। আর এখন বর্ষাকাল, তাই ইলিশ মাছ খাওয়ার ইচ্ছা তো বাড়বেই।

শ্রাবণ মাসে বাজারে ভরপুর থাকে ইলিশের আমদানি। তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় দামও থাকে কম। দাম হাতের নাগালে থাকায় ভোক্তারা ইলিশ একটু বেশিই কিনে থাকেন। কিন্তু এ বছর চিত্রটা ভিন্ন।

এখনো দাম বেশি হওয়ায় হতাশ ক্রেতারা। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকায়। আর ৪০০-৫০০ গ্রামের ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা।

শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোরে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা পাড়ের সোয়ারি ঘাট পাইকারি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বড় মাছের পাইকার ও আড়তদাররা বলছেন, সরবরাহ অনেক কম তাই দাম বেশি।

সোয়ারি ঘাটে আড়তদার মো. সামাদ সারাবাংলাকে বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে ইলিশের সরবরাহ অনেক কম। এজন্য বেশি দাম দিয়ে আমাদের কিনতে হচ্ছে। এ বছর সোয়ারি ঘাটে ইলিশ মাছের সরবরাহ কমে গেছে। ভরা-মৌসুমে সরবরাহ এত কমে গেল কেন প্রশ্নটাতো আমারও।

কদমতলী থেকে সোয়ারি ঘাটে ইলিশ কিনতে এসেছেন রিফাত। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমতো ইলিশের মৌসুম। এই সময় ইলিশ না খেলে চলে। কিন্তু যে দাম, বাজেটে কুলাচ্ছে না। গত বছর যে মাছ ৫০০ টাকায় কিনেছি সেটা এখন ৯০০-১০০ টাকা চাচ্ছে। সরবরাহ কম, বেশি দাম কিনেছি বিক্রেতাদের এসব কথা আমার কাছে ফালতু কথা বলে মনে হয়। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যখনই কোনো জিনিসের চাহিদা বাড়ে তখনই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়। এটা খুবই দুঃখজনক।

ঘাটের আরেক আড়তদার হাজী সাঈদ। ইলিশ সরবরাহ কমার ব্যাখ্যা দিয়ে আশার কথা শোনালেন তিনি। বললেন, বাজারে ইলিশের সরবরাহ এখন অনেক কম এটা ঠিক। দুই মাস আগে ইলিশ ধরার কথা থাকলেও পানি কম থাকায় ধরা হয়নি। এজন্য মাছ উঠতে সময় লাগছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বর থেকে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।

বাজার ঘুরে অনেককে জাটকা ইলিশ (১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের (ঠোঁট থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত) কম দৈর্ঘ্যের ইলিশকে জাটকা বা অপ্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ বলা হয়) কিনতে দেখা গেল। কিন্তু সেখানেও ক্রেতাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

বাজারে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম জাটকা ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা।

জাটকা ইলিশ বিক্রেতা পলাশ হাসান বলেন, আগে যে দামে কিনেছি এখনতো সেই দামে কিনতে পারি না। তাই আগের দামে বিক্রিও করতে পারছি না। এখন ক্রেতারাতো এইটা বোঝে না। এইযে আজকে দেড় কেজি জাটকা মাছ ৮০০ টাকায় কিনেছি, এখন আমি কি ১০০ টাকা লাভ করবো। আর ভাই এখন সব জিনিসের দামই বেশি, কিছু করার নাই। ৪৫০-৫০০ টাকার নিচে জাটকা মাছ নাই। আর এই বাজারে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।

সোয়ারি ঘাটের হাজী সাঈদ আড়তের লেবার ফারুক সরদার বলেন, সোয়ারি ঘাটে ইলিশ মাছ আসে ভোলা, ইলিশা, হাতিয়া, দৌলতখা ও বকশিবাজারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। প্রতি কেজি ইলিশ কেনা পড়ে ১৪৫০ টাকায় আর বিক্রি হয় ১৬০০ টাকায়। আড়তদাররা ১০০-১৫০ টাকা লাভ করবো এটাইতো স্বাভাবিক। আর জাটকা এক কেজিতে পাঁচটা হয়। কেনা পড়ে ৪০০-৪৫০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা ৫০০-৫৫০ টাকা বিক্রি করেন।

সোয়ারি ঘাটে মাছের সরবরাহ করেন মেহেদী। তিনি জানান, এই বাজারে দেশি মিঠা পানির মাছ যেমন পাওয়া যায় তেমনই পাওয়া যায় নদীর ও সামুদ্রিক মাছও। মাছগুলো ভোলা, চট্টগ্রাম, ইতিয়া এলাকা থেকে আনা হয়। এখান থেকে মাছ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।

ইলিশ মাছের দাম বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এখনতো ভরা মৌসুম, মাছও অনেক ধরা পড়তেছে। কিন্তু আমাদেরকেতো বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এখন আমরাতো ব্যবসায়ী, লাভের হিসাবটা যদি না করি তাহলে লেবার খরচ, টলার ভাড়া কিভাবে দেবো আর আমরাই বা কিভাবে চলবো।

বাজারে মলা, ঢেলা, কৈ, মাগুর, শিং, চিংড়ি, রুই, কাতলা, বোয়ালসহ কয়েক রকমের মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

 

রাজধানীর গুলিস্তান থেকে দেশি মাছ কিনতে এসেছেন আক্কাস মিয়া। কথা হলে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে চেয়ে আজকে দামটা বেশি। বড় সাইজের মাছের দাম কেজি প্রতি ৫০/১০০ টাকা বেড়েছে। যে গলদা চিংড়ি ৮০০ টাকায় কিনেছিলাম সেটা এখন এক হাজার টাকা চাচ্ছে। এক কেজি রুই মাছ ৩৫০-৩৮০ টাকা চাচ্ছে। অন্যান্য মাছেও কেজি প্রতি ৫০-১০০ টাকা বেশি।

উল্লেখ্য, সারাদেশের হাওর-বাওর, নদী থেকে মাছ আসে এই বাজারে। বিখ্যাত কয়েকটি মাছ বাজারের মধ্যে সোয়ারি ঘাট মাছ বাজার একটি। এখানে ভোর থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। এই বাজারে খুচরা কেনার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ এটি পাইকারি বাজার। রাজধানী ঢাকার সব জায়গা থেকে এখানে মাছ ব্যবসায়ীরা আসেন মাছ কিনতে। বাসা-বাড়ির জন্যও অনেকে নেন কিন্তু তাদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। এই বাজারে সরবরাহ ভালো থাকলে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।

সারাবাংলা/এআই/এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর