Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্বাদশের ভোটযুদ্ধে জিততে তৃণমূলে ঐক্যের বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ আগস্ট ২০২৩ ২৩:২৯

ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের লক্ষ্যে ভোটযুদ্ধে শামিল হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের ছয়মাস আগেই কেন্দ্র থেকে তূণমূলের প্রায় তিন হাজারের অধিক দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ দিকনির্দেশনা দিতে এবং পরামর্শ শুনতে গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা অতিমারির পরে এবারই প্রথম একসঙ্গে তৃণমূলের এত নেতা ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠবে গণভবনের আঙিনা।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে রোববার (৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে দশটায় দলটির বিশেষ বর্ধিত সভা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিশেষ বর্ধিত সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, জেলা ও মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন। সভায় সারা দেশ থেকে প্রায় তিন হাজার নেতা ও জনপ্রতিনিধি অংশ নেবেন।

বিজ্ঞাপন

দলের দফতর সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাদেশে প্রাায় দুই হাজার ৮৫৬ জন তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধির একটি তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকায় বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও আছেন। গত জুলাই মাসে তৃণমূলের নেতাদের কাছে কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে নামের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

নেতারা জানান, সারাদেশের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনি গাইডলাইন দেবেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বিভাগওয়ারী তৃণমূলের প্রতিনিধিদেরও কথা শুনবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভাকে সফল করার লক্ষ্যে গণভবনের খোলা মাঠে বিশাল প্যান্ডেল করা হয়েছে। বিভাগওয়ারী নেতাদের আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা স্বার্থ সংঘাতের দ্বন্দ্ব সংকট তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো টানা জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে তূণমূলের ঐক্যের কোনো বিকল্প দেখছে না দলের হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যেই দলের তৃণমূল প্রতিনিধিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নানা দিক-নির্দেশন দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। মূলত নির্বাচনে জয়ের জন্য সবাইকে নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ফেলার বার্তা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নির্বাচনে জয়ের জন্য সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা। এদিকে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের নামে এক দফা কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে, সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে তৃণমূল নেতাদের বিশেষ বার্তা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিএনপি নির্বাচন বানচালের নামে কোনো প্রকার সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে জনগণের জানমাল রক্ষায় প্রতিরোধ করারও বার্তা দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

নেতারা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য হবে। সে বিষয়েও প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানাবেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে নৌকার জয় অবধারিত। তাই বর্ধিত সভায় আট বিভাগের প্রতিটি জেলা, উপজেলাসহ মহানগর নেতাদের বক্তব্য শুনবেন এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশেষ বর্ধিত সভায় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রতিবারের তিনি এ ধরনের বিশেষ সভা করে থাকেন। এবারও তিনি তৃণমূল নেতাদের তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকেছেন। কারণ করোনা মহামারির কারণে তৃণমূলের শত শত নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা মাননীয় নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। তাই তিনি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে ঐক্য, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিসহ সার্বিক বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে আমরা আশা করছি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকালের বিশেষ বর্ধিত সভাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে উন্নীতকরণের বয়োঃসন্ধিকালে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে জননেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।  সব দলীয় কোন্দল বা রেষারেষি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে পারলে বিজয় আসবে বলে দল মনে করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দলের তৃণমূল পর্যন্ত ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং জনগণের দোড়গোড়ায় বারবার গিয়ে ভোট প্রার্থনা করা, স্থানীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অব্যাহত রেখে বিজয় সুনিশ্চিত করার জন্য দলনেত্রী, রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনা দিক-নির্দেশনা প্রদান করবেন এবং তৃণমূলের পরামর্শ শুনবেন। মানুষের সঙ্গে আত্মিকভাবে মেলামেশা করা তৃণমূলের পরামর্শসমূহ ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনায় সংযুক্ত করা হবে।’

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের বিশেষ বর্ধিত সভায় কোনো সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা স্থির করা যায় না। মাননীয় সভানেত্রী তিনি দলের তৃণমূলের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শুনবেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগের অবস্থানটা কী হবে? আমাদের করণীয় কি হবে? সবকিছু নিয়ে তিনি আলোকপাত করবেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা থেকে তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি দিক-নির্দেশনাশূলক বক্তব্য রাখবেন।’

এদিকে বিশেষ বর্ধিত সভা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী গণভবনে আমন্ত্রিত নেতাদের বিজয় সরণি দিয়ে জাতীয় সংসদের লেক রোড হয়ে গণভবনের ১ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে।

সভায় অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার নির্ধারিত স্থান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসংলগ্ন মাঠ। সেখানে সবার গাড়ি পার্কিং করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই নির্দেশনা মেনে চলতে এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ তৃণমূল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর