জাপানে মার্কিন পারমাণবিক হামলার ৭৮ বছর আজ
৬ আগস্ট ২০২৩ ১৪:১৬
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার ৭৮তম বার্ষিকী পালন করেছে জাপান, যা হিরোশিমা দিবস নামে পরিচিত। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে মার্কিন বিমান বাহিনী দেশটির হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের পারমাণবিক বোমা ফেলে। এ হামলার তিন দিন পর নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর থেকেই বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে দিবসটি বিশেষভাবে পালন করে আসছে জাপান। চলতি বছর মে’তে হিরোশিয়ায় গ্রুপ অব সেভেন’ভুক্ত (জি-৭) দেশগুলো নেতারা মিলিত হন। সেই সময় বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক হামলায় নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নেতারা। এরপর তা বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে।
সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্বব্যাপী উত্তেজনার মধ্যেও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতেও একইভাবে বোমা হামলা করা হয়েছিল। যা পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়ংকর বাস্তবতা প্রকাশ করার। তাই বর্তমার পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন বিশ্বের জন্য প্রচেষ্টা দ্বিগুণ হয়েছে।
জি-৭ সম্মেলন চলাকালে অঘোষিতভাবে হিরোশিমা শহর সফর করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে রুশ হামলার পর থেকে নিজের দেশকে রক্ষার জন্য সামরিক সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। বৈঠকে জি-৭ নেতারা ‘হিরোশিমা ভিশন’ সম্মত হন, যা পারমাণবিক যুদ্ধের বিষয়ে সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্র বর্জন এবং তথ্য আদান-প্রদান উন্নত করার আহ্বান জানায়। তবে বাস্তবতা হলো পারমাণবিক হামলার হুমকি বাড়ছে।
নাগাসাকি ইউনিভার্সিটির রিসার্চ সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার উইপন্স অ্যাবোলিশন (আরইসিএনএ) তথ্যমতে, বিশ্বের ৯টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের কাছে জুন পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৫২০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল। তবে ২০০টি ওয়ারহেড হ্রাস পেয়েছে, যা প্রায় ২ শতাংশ। রাশিয়ার কাছে ৫ হাজার ৮৯০টি ওয়ারহেড আছে, যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। দেশটি বারবার ইউক্রেনে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার হুমকি দিচ্ছে। এদিকে গত বছরে চীন তার পারমাণবিক অস্ত্রে মজুদ প্রায় ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪১০টিতে উন্নীত করেছে।
যদিও কিছু পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ কমানো হয়েছে। তবে গত পাঁচ বছরে সামগ্রিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত অস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরইসিএনএ বলেছে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, অপ্রসারণ এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কাঠামো একটি বিশাল পথ সামনে উন্মুক্ত। তবে ‘পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন বিশ্ব’ তৈরির এই রাস্তাটি অত্যন্ত পাথুরে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৫ সালের আগস্টে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে হিরোশিমাতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যান। আর নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪ হাজার লোকের পাণহানি ঘটে। পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে মারা যান আরও ২ লাখ ১৪ হাজার জাপানি। দুই শহরে হতাহতের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। সেই ক্ষত মনে ধারণ করে এই দিনটিকে হিরোশিমা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে জাপান।
[নিক্কেই এশিয়া থেকে অনুবাদ করেছেন সারাবাংলার নিউজরুম এডিটর নূর সুমন]
সারাবাংলা/এনএস
জাপান নাগাসাকি পারমাণবিক হামলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমা হিরোশিমা দিবস