মান্নার মৃত্যুতে করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি চান স্ত্রী
৬ আগস্ট ২০২৩ ১৭:২৪
ঢাকা: চিত্রনায়ক এস এম আসলাম তালুকদার মান্নার অবহেলাজনিত মৃত্যুতে দায়ের করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার স্ত্রী শেলী কাদের।
রোববার (৬ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে মান্নার স্ত্রী শেলী কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে শেলী কাদের বলেন, ‘২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেছি। এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। আমি মান্না হত্যার বিচার চাই। ন্যায় বিচার চাই। মান্না হত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ তিনি স্বজন হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর মর্মটি তিনি ভালো বুঝেন।’
নায়ক মান্নার স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, প্রযোজন ও নায়ক মান্না মারা গেছেন। ২০০৮ সালে আমরা একটি মামলা করেছিলাম। অবহেলাজনিত অভিযোগে মামলাটি করেছিলাম। সে সময় ভেবেছিলাম মামলাটির অচিরেই বিচার হবে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল এতো দিন হলো মামলাটি শুনানি হয়নি। কোনো সুরাহা না পেয়ে আমি এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন দিচ্ছি। কারণ তিনি এই স্বজন হারানোর ব্যথাটা ভালো বোঝেন। তিনি স্বজনহারা হয়েছেন।’
কন্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘একমাত্র সন্তানকে নিয়ে সেই ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাফারিং করতে হচ্ছে। আমার স্বামীর বিচারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। তিনি যেন এই বিচারের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি যেন আলোকপাত করেন। আমরা প্রথম দিকে খুব ভালো রেজাল্ট পাচ্ছিলাম। আসামি অ্যারেস্ট অর্ডার হয়েছিল।’
মান্নার স্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে তার মৃত্যুটি হয়েছিল নেগলেজেন্সি। সে হাসপাতালে গেছে কিন্তু ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টায়। তখন কোনো ডাক্তার পাওয়া যায়নি। সে নিজেই গাড়ি চালিয়ে গেছেন। তার এই বিষয়ে কোনো ডাক্তার ছিল না। আমার স্বামী যখন ভোর ৫টা সাড়ে ৫টায় যায়, সেই ডকুমেন্ট আছে। (নায়ক মান্না যখন হাসপাতালে যান) তখন প্রপার (বিশেষজ্ঞ) ডাক্তার ছিল না। ডিউটিরত ডাক্তাররা ছিল। তারা হয়তো চেষ্টা করছিল। সকাল ৯টার পরে তার প্রপার ডাক্তার এসেছিল। তখন কি আমার হাজবেন্ড বেঁচে ছিল?’
‘আমার প্রশ্ন হলো তার অনেক কাজ ছিল, তার ওপর কত দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তিনি অবহেলা অনাদরে চলে গেছেন। সকাল সাড়ে ৭টার সময় ইনজেকশন দেওয়া হয়। তখন আমার ভাই আশঙ্কা করেছিল। মান্না বমি করেছিল। সেই সময়েও কোনো প্রপার ডাক্তার ছিল কি না। এখন মামলাটি যে পর্যায়ে এসেছে। আমাদের আইনজীবী ভালো বলতে পারবেন মামলাটি কেন দীর্ঘায়িত হচ্ছে।’
আজকে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলার খোঁজ নিতে এসেছিলাম। একটা মামলা যখন হয়েছে। আমি একটি সুষ্ঠু বিচার চাই।’
জানা যায়, ২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেন নায়ক মান্নার শ্যালক রেজা কাদের। পরে এ মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়।
বিচারবিভাগীয় তদন্তে প্রাথমিকভাবে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি ছয় ডাক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরদিনই তারা হাইকোর্টে জামিনের জন্য গেলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাদের আট সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন।
ওই বছরের ১৬ মার্চ চিকিৎসকরা আত্মসর্পণ করলে ৫০ হাজার টাকা বন্ডে স্বাক্ষর করে জামিন লাভ করেন। এরপর ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর ছয় ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিশেষ দায়রা জজ ফিরোজ আলম। এরপর এক, দুই ও তিন নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য থাকা দিনেই সংশ্লিষ্ট বিচারক বদলি হয়ে যান। থেমে যায় সাক্ষ্যগ্রহণ।
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। কিন্তু সেই রিট আবেদনের শুানানিও শুরু করছেন না আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ইতোমধ্যে এ বছর (২০১১ সালে) শুনানির জন্য ১৫ কার্যদিবস ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষ শুনানি না করে সময়ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ করেন মান্নার মামলার আইনজীবী ড. ব্যারিস্টার খন্দকার মুহাম্মদ মুশফিকুল হুদা।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে কিছুটা অসুস্থ বোধ করায় গাড়ি চালিয়ে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে যান মান্না। এরপর ওই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সেদিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহলোয় তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস