Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত মা, নেই মাতৃত্বের ন্যূনতম সুবিধা


১৩ মে ২০১৮ ০৯:০৭ | আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ১২:১৮

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।

বাংলাদেশের শ্রম আইনে মাতৃত্বের সুযোগ-সুবিধায় মায়েদের সরকারি ও বেসরকারি এ দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে সুযোগ বঞ্চিত হওয়াদের সবাই এক, কর্মজীবী মা। কর্মক্ষেত্রে নারীদের যোগ দেওয়ার হার বাড়লেও বাড়েনি তাদের জন্য সুযোগ সুবিধা। বঞ্চিত হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত মায়েরা। অথচ ২০১৮ তে প্রকাশিত শ্রম জরিপ অনুযায়ী উচ্চ পর্যায়ের কর্মক্ষেত্রের নারীদের অংশগ্রণের দিকে থেকে স্বাস্থ্যখাত দ্বিতীয় বৃহত্তম।

বিজ্ঞাপন

কী সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল কর্মজীবী নারীদের?

২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীরা সন্তান জন্মদানের আগে ও পরে সব মিলিয়ে ন্যুনতম চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করবেন। এই ছুটির সময় তারা পুরো বেতন পাবেন। ২০১১ সালে সারকারী চাকরিজীবী নারীদের জন্য এই ছুটির ৬ মাসে বর্ধিত করা হয়।

এ ছাড়াও শ্রম আইনের ৯৪ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোনো কর্মক্ষেত্রে ৪০ জন বা তার বেশি নারী কাজ করেন তাহলে তাদের সন্তানদের জন্য একটি শিশু কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে।

আইন কতটা মানা হচ্ছে?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. নাজমুল করিম মানিক জানান, সরকারি প্রায় সকল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও নার্সরা ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পান।

তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন বক্ষব্যাধি হাসপাতালের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ড. ফারহানা নাশিদ।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে যখন জন্ম নেয় তখন আমি ঢাকার বাইরে একটি সদর হাসপাতালে কর্মরত ছিলাম। ছুটি নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
তবে ড. ফারহানার মতো সৌভাগ্যবান নন বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা। ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট কর্মরত চিকিৎসক শারমিন

বিজ্ঞাপন

সুলতানা বলেন, ‘বেসরকারি হওয়ার কারণে আমাদের ছুটি চার মাসে। তবে সৌভাগ্য এই যে আমরা আরও দুই মাস অবৈতনিক ছুটি পেতে পারি, যা প্রায় অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক বা নার্স মায়েরা পান না।’

নাম না প্রকাশের শর্তে স্কয়ার হাসপাতালে কর্মরত একজন মা বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি মাত্র তিন মাস ১০ দিন। এরপরে আমরা যখন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেই তখন আমাদের বাচ্চাদের রাখার জন্য কোনো ডে কেয়ারও থাকে না। ফলে নিজেদের প্রসবপরবর্তী ক্লান্তির কথা ভাবা দূরে থাক, সন্তানকে কোথায় রেখে কাজে যোগ দেব তাই ভেবে পাই না।’

একই অভিযোগ করেন শাহবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে কর্মরত একজন চিকিৎসক মা। বলেন, ‘আমি ছুটি পেয়েছি মাত্র দুই মাস। তাও কোনো প্রতিষ্ঠানিক ছুটি নয়। মুখে মুখে ছুটি। দুই মাস পরে আমাদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়। যেটা আসলেই খুব কষ্টকর ছিল।’

শিশুকক্ষ আইনটা মানে না প্রায় কোনো প্রতিষ্ঠানই। সরকারি স্বাস্থ্যখাতে শিশুকক্ষ আছে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে। তাও সেটা প্রক্রিয়াধীন।

ড. ফারহানা বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজেই নেই কোনো শিশু কক্ষ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসবের চিন্তাও করা যায় না। ছোট বাচ্চাকে রেখে কাজ করাটা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বেসরকারি পর্যায়ে শুধুমাত্র অ্যাপোলো হাসপাতালে রয়েছে একটি শিশুকক্ষ। বাকি কোনো প্রতিষ্ঠানে এরকম কোনো আইনের বিষয়ে সচেতন নন কেউ।

ছয় মাসের আগে মা কাজে যোগ দিলে শিশুর কী ক্ষতি হয়?

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিশু রোগ বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক সুরাইয়া পারভীন বলেন, একজন মা যদি ছয় মাস পুরো সময় সন্তানকে দুধ না খাওয়াতে পারেন তবে শিশুর খাদ্য চাহিদা পূরণ হয় না। শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধই খেতে হবে। এর বাইরে কোনো খাবার হজম করার মতো শক্তিশালী পাকস্থলি একটি ছয় মাস বয়সের নিচের শিশুর থাকে না।

একটা শিশু যদি ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ না পায় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। সে ঘন ঘন অসুখে পড়ে, এতে শিশু মৃত্যুর হারও বেড়ে যায়, যোগ করেন তিনি।

ড. ফারহানা বলেন, ডাক্তার হওয়ার সুবিধার্থে এই ক্ষতিগুলোর কথা আমরা সবচেয়ে ভালো জানি। ফলে কাজ করা সব সময় শিশুর শারীরিক কষ্টের কারণ নয়। আমাদের মায়েদের মানসিক কষ্টের কারণও হয়।

মাতৃত্বকালীন সুবিধা বঞ্চিত মায়েরা কী করতে পারেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন জানান, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি মায়েদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন তবে তারা শ্রম আদালতে বিচার চাইতে পারেন।

এই প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেওয়া প্রায় সব মা জানান, শ্রম আদালতে যাওয়া বিষয়টি খুব জটিল। এখানে চাকরি হারানোর ভয় থাকে এমনকি ক্যারিয়ারেও এর প্রভাব পড়ে। এই ঝুঁকি কেউ নিতে চান না।

তাসলিমা বলেন, এটা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব দেখা যে কোনো আইন অমান্য হচ্ছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে তার বাবস্থা নেওয়াও তাদের দায়িত্ব।

তারপরেও যদি কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এই আইন প্রায়োগ না করেন তবে সচেতন যে কেউ এই আইনের সুবিধাভোগী না হলেও হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন করতে পারেন। কর্মজীবী নারীদের সর্বোত্তম স্বার্থে তখন এ সমস্যা সমাধান হতে পারে।

https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/615840558776356/

সারাবাংলা/এমএ/একে/এমআইএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর