খুলনায় নির্বাচনের মাঠ গরম, রোববার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রচারণা
১৩ মে ২০১৮ ০৯:১৯
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: আজ রোববার (১৩) মধ্যরাত থেকে শেষ হচ্ছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের প্রচারণা। ইতিমধ্যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ থেকে মাঠে নামছে বিজিবি, ব্যাব ও পুলিশ। ১৫ মে অনুষ্ঠেয় কেসিসির নির্বাচনে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ৩১টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও ২টি ওয়ার্ডে ইভিএম, ৩ কেন্দ্রে সিসিটিবি থাকছে। নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের পাশাপাশি ইসির কর্মকর্তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষক থাকছেন ১০ জন। এসব কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আরো ৫ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলা ডটনেটকে বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ইসির পক্ষ থেকে সবাত্মক প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে যাতে কেউ কোন প্রকার অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেজন্য পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া আছে। ইসি এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
ইসি সূত্র আরও জানায়, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কেসিসিরি ৩১ ওয়ার্ডে ৭০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কমিশন। এর মধ্যে ৩১টি ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক অন ডিউটিতে থাকবেন ৪৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ১৩ জন থাকবেন স্ট্যান্ডবাই। প্রয়োজন সাপেক্ষে তারা মুভ করবেন আর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন আরো ১০ জন। এছাড়াও নির্বাচন উপলক্ষে আজ রোববার থেকে খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৬ প্ল্যাটুন বিজিবি, র্যাবের মোবাইল টিম থাকবে ৩২টি, পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে ৭০টি, এবং পুলিশের স্ট্র্যাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে আরো ১১টি টিম।
অন্যদিকে কেসিসি‘র প্রতি ৩টি ওয়ার্ডের জন্য ১জন করে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষক করা হচ্ছে। শহরকেন্দ্রিক ২৪ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ৩টি কেন্দ্রে থাকছে গোপন ক্যামেরা বা সিসিটিভি। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- সরকারি বিএল কলেজ কেন্দ্র, সিটির পিটিআই কেন্দ্র এবং পাইনিওয়ার কলেজ কেন্দ্র। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারণায় সামাজিব যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কমিশন। এর মধ্যে ফেসবুক ও টুইটার। এর জন্য মঙ্গলবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে সভা করেছে কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, চার স্তরের নিরাপত্তায় থাকবে ৮ হাজারের বেশি র্ফোস। সঙ্গে থাকছে ৪ হাজার ৯৭২জন নির্বাচনী কর্মকর্তা। কমিশনের অনুমোদিত স্টিকার ব্যতিত মটর সাইকেল চলাচলেও আরোপ হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আর ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকবে নির্বাচনী এলাকায়। খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৩৯ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৫ দল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে। তবে মূল লড়াই হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি বিদেশী সংস্থা এবং দেশীয় বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষক সংস্থার পাশাপাশি প্রিন্ট, টিভি মিডিয়া এবং অনলাইন গণমাধ্যমের কয়েকশ সাংবাদিক ইতিমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে কেসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী শনিবারে সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রভিত্তিক বাছাই করা হচ্ছে। আগামীকাল থেকে ১৬ প্ল্যাটুন বিজিবি, পুলিশের ৭০টি মোবাইল টিম, ১১ টি স্ট্র্যাইকিং টিম এবং ৩২টি র্যাবের টিম মাঠে নামবে। তারা সিটি এলাকায় পেট্রোলিং করবে। এছাড়া নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ইসির কর্মকর্তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষক থাকছেন ১০ জন। এসব কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আরো ৫ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।
ইউনূচ আলী বলেন, শহর কেন্দ্রিক, অবকাঠামো রয়েছে এবং শিক্ষিত এলাকা বিবেচনায় ২৪ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে ইভিএমে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্পর্শকাতর বিবেচনায় এ সিটির ৩টি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ভোট নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই, ভোট কারচুপি ও কেন্দ্রদখল করে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিলমারা বন্ধে এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে খুলনা সিটির বিএন কলেজ, পিটিআই কেন্দ্র ও পাইওনিয়র কলেজ কেন্দ্রে। এসব ক্যামেরার সহায়তায় সাধারণ ভোটার ও সাধারণ মানুষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এসব কেন্দ্রের চিত্র ঢাকার নির্বাচন ভবন থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে কমিশন।
সূত্রমতে, খুলনা সিটির প্রায় ৮০ শতাংশ কেন্দ্রই ঝূঁকিপূর্ণ। তবে, সাধারণ ও ঝূঁকিপূর্ণ ধরে কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে ইসি। এ হিসেবে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন নিরাপত্তা সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটের দুই দিন আগে, ভোটের দিন, এবং ভোটের পরে একদিন সব মিলিয়ে চারদিন মাঠে থাকবে।
উল্লেখ্য খুলনা সিটিতে ৩১টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৮ এবং নারী দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৬ জন।
সারাবাংলা/জিএস/এমআইএস