Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪৮ ঘণ্টার সময় পেরোলো ১১ বছর, শতবারেও এলো না প্রতিবেদন

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ আগস্ট ২০২৩ ২২:৪৩

ঢাকা: তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির খুনিদের গ্রেফতার করার কথা বলেছিলেন । কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টার ফলাফল ১১ বছর এসেও শূন্য রয়েছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ১১ বছর ধরে চার্জশিট অথবা ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতেই পারলেন না। এই সময়ের মধ্যে শতবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন পাল্টেছে।

সোমবার (৭ আগস্ট) মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শততম তারিখ ধার্য ছিল। তবে এদিনও তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত আগামী ১১ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন দিয়েছেন। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পর সাড়ে ১১ বছরে ঢাকার সিএমএম আদালত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে শতবার সময় দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপক্ষের ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জানান, এটি (সাগর-রুনি হত্য) চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। অনেক বছর হয়ে গেছে। এটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, তাই মামলাটির দ্রুত সুরহা হওয়া উচিত। আদালতে প্রতিবেদন আসামাত্র রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করবে।

আইন বিশেষজ্ঞ ঢাকা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাবেক ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী জানান, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ (৫) ধারায় ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে কোনো মামলার তদন্ত শেষ করার বিধান রয়েছে। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরও মামলার তদন্ত চলতে বাধা নেই। তবে এই নয় যে, তা বছরের পর বছর তা চলতে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে কি না এ বিষয়ে আদালতের নজরদারি বাড়াতে হবে। আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে কেস ডায়েরিসহ তলব করতে পারেন। কেস ডায়েরিতে একটি মামলার তদন্তের প্রতিদিনের হিসাব থাকে। তদন্ত কর্মকর্তার কেস ডায়েরি পর্যালোচনা করে যদি বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন যে, তদন্ত কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করছেন, তখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারেন। একই সঙ্গে পরবর্তী ধার্য তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারেন।’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে আসামিদের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবু সাইদ সিদ্দিকী (টিপু) বলছেন, ‘মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানোর জন্য রাষ্ট ও আসামিপক্ষ উভয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আমাদের আশা যেন দ্রুত মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়, আর প্রকৃত খুনিরা বেরিয়ে আসুক, নিরপরাধ ব্যক্তিরাও যেন অব্যাহতি পায়।’

তিনি আর বলেন, ‘পুলিশ চাইলে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনেক সময় নিতে পারেন। আইনে তদন্ত কর্মকর্তা সেই সুযোগ দিয়েছে। এ কারণে তারা নিচ্ছেন। এর ফলে আসামিরাও ঝুলে আছেন। তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত বলতে পারছি না আসামিরা দোষী না নিদোর্ষ। আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, তদন্ত কর্মকর্তা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করুক।’

এদিকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন একথা জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলায় র‌্যাব কর্তৃক আটককৃত ও সন্দিগ্ধ আসামিসহ মোট ২৫ জনের Buccal Swab, আলামতগুলো ডিএনএ টেস্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের IFS (Independent Forensic Service) পরীক্ষাগারে পাঠানো করা হয়। র‌্যাবে কর্মরত অভিজ্ঞ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম মামলাটি তদন্ত করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের IFS (Independent Forensic Service) ল্যাবে প্রেরিত DNA প্রতিবেদন সংক্রান্তে তদন্ত চলমান।’

ডিএনএ প্রতিবেদনে প্রাপ্ত অজ্ঞাত দুইজন আসামিকে শনাক্ত করার জন্য অধিকতর তদন্ত ও ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন সাজা না পায় এবং প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী র‌্যাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাদীপক্ষ বিজ্ঞ আদালতে অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনে অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা করতে পারেন।

মামলার নথি থেকে দেখা যায়, মামলায় গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে নিহত রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল জামিনে আছেন। আর বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, ও আবু সাঈদ কারাগারে আছেন।

ঘটনার পর প্রথম মামলাটি তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। তারপর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দেওয়া হয়। দুই মাসের বেশি সময় ডিবি তদন্তের পর একপর্যায়ে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার র‌্যাবকে দেওয়া হয়।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়।

ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

সারাবাংলা/এআই/একে

সাগর-রুনি সাংবাদিক হত্যা হত্যাকাণ্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর