‘মা-বাবার থেকে যেটুকু শিখেছি, সেটুকুই দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি’
৮ আগস্ট ২০২৩ ১৬:২৬
ঢাকা: ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন বলেই সফলতা পেয়েছিলেন জানিয়ে তার কন্যা প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মায়ের কাছ থেকে যেটুকু শিখেছি, বাবার কাছ থেকে যেটুকু শিখেছি, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেটুকু দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার মা কিন্তু তার জীবন ভিক্ষা চায়নি। জীবনে-মরণেও আমার বাবার সাথী হয়ে চলে গেছেন।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
‘সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা প্রেরণায় বঙ্গমাতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণলায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে খেলাধূলা, রাজনীতি শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান রাখায় দুজন এবং গবেষণায় একজনসহ মোট চার নারীর হাতে ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছাত্রজীবন থেকে আমার মা পাশে থাকার ফলে তার (বঙ্গবন্ধু) ছাত্রজীবন কিন্তু সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়ে, শুধু ছাত্রজীবন না রাজনৈতিক জীবনেও। তিনি সবসময় পাশে ছিলেন। তিনি বলতেন রাজনীতি করো, আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করো।
তিনি বলেন, ‘আমার মাকেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মামলায় মাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। একটা পর্যায়ে পাকিস্তানের কিছু নেতা ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আসেন ৬ দফার পরিবর্তে ৮ দফার প্রস্তাব নিয়ে। আমার মায়ের অদ্ভুত স্মরণশক্তি ছিল। তিনি শুনতে এবং জেলখানায় গিয়ে আব্বার কাছে সেই কথাগুলো বলতেন। আব্বা যে নিদের্শনা দিতেন সেটা নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। আমরা মাকে ঠাট্টা করে বলতাম তুমি তো জীবন্ত টেপ রেকর্ডার।’
সব সময় তাদের বাসায় গোয়েন্দা নজরদারি থাকত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে আমার মা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং নির্দেশনা দিতেন। ৭ই জুনের হরতাল, আমি বলব, আমার মা সম্পূর্ণ এই হরতালটা সফল করেছিলেন। কিন্তু ছয় দফা দেওয়ার পর আমাদের উপরের দিকের নেতারা একটু বেতাল হয়ে যায়। কারণ পাকিস্তান থেকে বড় বড় নেতারা আসছে। এখন যেটা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যারয় সেটা তখন একটা হোটেলেই ছিল। ওইখানেই সকলের আড্ডা এবং আট দফার জন্য আামদের অনেক নেতারা আমার মাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মার একটাই কথা ছিল, উনি ছয় দফা দিয়ে গেছেন, এই ছয় দফাই থাকবে, এর কোনো ব্যতয় ঘটবে না। যদি কিছু হয়, এটা ওনাকে (বঙ্গবন্ধু) বলতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার এখনও মনে আছে আমাদের বহু নেতা, আমাদের চাচার দল, আমাদেরকেও বোঝানোর চেষ্টা করেছে। তোমরা কিচ্ছু বুঝবে না, আট দফা দিলেই তো হয়ে গেল। মা বলতেন, এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। আমাদের বাসায় মিটিং হত। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং, ছয় দফা না আট দফা সেটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক। আমার মা রান্নাবান্না করে সবাইকে খাওয়াতেন। তখন টাকা পয়সাও ছিল না। এতো ডেকোরেশন-ডেকোরেটরও ছিল না। কিন্তু নিজের হাতেই সব করতেন। এরপর আইয়ুব খান আসলেন, আব্বার সঙ্গে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে।
আমার মা সেখানেও বলেন, প্যারোলে না। আইয়ুব খান মামলা প্রত্যাহার করবে। সকলকে ছেড়ে দেবে। মুক্ত মানুষ হিসেবে যাবেন। আমাদের অনেক নেতারা, বেশ বড় বড় হোমড়া-চোমড়া নেতারাও তখন সেখানে আব্বাকে যে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী রাখা হয়েছে, সেখানে সবাই চলে গেছেন এবং তাকে বোঝাবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি মার ওই বার্তাটা আব্বার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম। কারণ আমার মা জানতেন এ রকম একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাই আব্বাকে আগেই সতর্ক করেছিলেন।’
‘যখন আব্বা প্যারোলে গেলেন না, আমাদের নেতারা বাড়িতে এসে আমার মাকে ছেঁকে ধরলেন। শুধু বললেন, আপনি এটা কি করলেন? জানেন তারা (পাকিস্তানিরা) তো মেরে ফেলবে, আপনি বিধবা হবেন। মা খালি বলেছিলেন, আরও তো আসামিরা আছে? তাদেরও তো স্ত্রীরা আছে, তারাও বিধবা হবে। আমি একা সধবা থাকার চেষ্টা করব তাদের বাদ দিয়ে?’
আপনারা একটু চিন্তা করেন কত দৃঢ় মনোবল ছিল আমার মায়ের যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী।
৭ই মার্চ জাতির পিতার ভাষণের অন্তরালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ভূমিকার প্রেক্ষাপট তুলে ধরার পাশাপাশি ১৫ আগস্ট কালরাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ